নতুন করে কী হচ্ছে সিরিয়ায়?

3 hours ago 6

সিরিয়ায় গত কয়েকদিনে নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে আসাদপন্থি সেনাদের সংঘাতে এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংঘাতটি ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সন্ত্রাসী হামলার ফলে বেশ কয়েকটি শহরে বেসামরিক নাগরিকদেরও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে, বিশেষত সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলের শহরগুলোতে।

সংঘাতের শুরু ও বিস্তার 

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলের লাটাকিয়া ও জাবলেহ শহরের নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে আসাদ সমর্থক সেনারা হামলা চালায়। এই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য নিহত হন।

হামলার পর সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার (৭ মার্চ) ও শনিবার (৮ মার্চ) আসাদ সমর্থক সেনাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এর ফলে, এই অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যালঘু আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়।

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন 

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ বিবিসি সংবাদমাধ্যমকে জানায়, সাম্প্রতিক সহিংসতার ফলে অন্তত ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে।

দুপক্ষের সংঘাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন এবং আসাদ সমর্থক সেনাদের ২৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। এই সংঘাতের ফলে মোট নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৩১১ জনে পৌঁছেছে।

আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের ওপর হামলা 

উল্লেখ্য, আলাওয়াইতরা শিয়া মুসলিমদের একটি উপসম্প্রদায়। সিরিয়ায় এই সম্প্রদায়ের প্রায় ১০% মানুষ বাস করেন এবং বাশার আল আসাদ সেই সম্প্রদায়ের। সিরিয়ায় গত ১৪ বছর গৃহযুদ্ধের সময় আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের সেনারা সুন্নি জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। 

এর ফলে, আসাদের পতনের পর অনেক সুন্নি মতাবলম্বী সেনা কর্মকর্তার মধ্যে আলাওয়াইতদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলের শহরগুলোতে আসাদ সমর্থক আলাওয়াইত সেনাদের বিরুদ্ধে হামলার পর সাধারণ আলাওয়াইত নাগরিকদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়।

হামলার পেছনে কারণ 

প্রসঙ্গত, সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো বেশকিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যাদের দলে বিদেশি সেনা রয়েছে এবং যারা কট্টরপন্থি ইসলামি মতাদর্শের অনুসারী। আসাদ সমর্থক সেনাদের বিরুদ্ধে সিরিয়ার নিরাপত্তা রক্ষীরা অভিযান চালায় পাশাপাশি দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যালঘু আলাওয়াইত গোষ্ঠীর নাগরিকদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়। ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন তাদের ওপর বিদেশি বিদ্রোহী যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট চালায়।

বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 

বাশার আল আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। নতুন শাসক আহমেদ আল শারা সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করলেও, তার অধীনে সব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়নি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিদেশি যোদ্ধাদের সরে যাওয়ার ওপর। একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নও এই অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সিরিয়ায় গত কয়েকদিনে যে সহিংসতা এবং হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার লক্ষণ। এটি কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। 

এর মধ্যে আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, যা জাতিগত বিদ্বেষের ফলস্বরূপ ঘটছে। পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে সিরিয়ার জনগণের জন্য আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।

সূত্র : বিবিসি

Read Entire Article