গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
তিনি বলেন, দুই হাজার তাজা প্রাণের বিনিময়ে যদি আমরা নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে ২০-৩০ বছর পর আবার চার হাজার মানুষকে জীবন দিতে হবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন আবদুল হান্নান মাসউদ।
সূধীজনের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য যদি হতো আওয়ামী লীগকে এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে আবার চাঁদাবাজদের বসাবো, তাহলে কেন রিকশাশ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছিল আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধ করার জন্য। তাছাড়া আমাদের লক্ষ্য যদি হতো একটি চাকরি পাওয়া, তাহলে কেন নবম-দশম শ্রেণির ছাত্ররা, চার-পাঁচ বছরের শিশুদের শহীদ হতে হয়েছে?
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আপনারা ভেবে দেখবেন, আমরা শুধু আহ্বান করেছিলাম- আমাদের ওপর হামলা করছে, আপনারা ঘর থেকে বের হয়ে আসুন, আপনারা অফিসে যাবেন না। তারা আমাদের কথায় সাড়া দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল। সেই লোকগুলোকে এখনো যদি রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে চাঁদা দিতে হয়, আপনাদের যদি বাধা দেওয়ার সেই সাহসটা না থাকে, তাহলে এই বাংলাদেশ কখনো পরিবর্তন হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে রাজপথে লড়াই করেছে। এর মধ্যে স্বৈরাচারের গুলির আঘাতে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। শত মায়ের বুক খালি হয়েছে। হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এত এত ত্যাগের লক্ষ্য ছিল সুন্দর একটি বাংলাদেশ। যেখানে আমরা মুক্তভাবে প্রাণখুলে নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারবো। যে কথাগুলো হবে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে এবং শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, ঘুস, মাদকসহ সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ.এফ.এম আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুক, নোবিপ্রবি পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের শাখা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাদের প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ। এতে উপস্থিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মা-বাবা এবং আহত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের দেয়ালিকা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/জিকেএস