নবিজি (সা.) যাদের ‘আল্লাহর পরিজন’ বলেছেন

কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ। সৃষ্টির উপর স্রষ্টার মর্যাদা যেমন, পৃথিবীর সব কথা, বক্তব্য ও গ্রন্থের ওপর কোরআনের মর্যাদাও তেমন। আল্লাহ তাআলা কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, পূত-পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়তানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না, তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাজিলকৃত। (সুরা ওয়াকিয়া: ৭৭-৮০)

পৃথিবীতে কোরআন যাদের সঙ্গী হবে, যারা কোরআন তেলাওয়াত করবে, কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, কেয়ামতের কঠিন দিনে কোরআন তাদের তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে, সুপারিশ করবে, তাদের জন্য ছায়া হবে।

আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনারা কোরআন পড়ুন। কোরআন পাঠ কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। আপনারা দুই উজ্জ্বল সুরা বাকারা ও আলে ইমরান পড়বেন। কেয়ামতের দিন এ সুরা দুটি মেঘখণ্ড অথবা দুটি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে এবং তাদের পাঠকদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। বিশেষ করে তোমরা সুরা বাকারা পড়বেন। সুরা বাকারা পড়া বরকত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সুরা অলস ও নির্বোধরা পড়তে পারবে না। (সহিহ মুসলিম: ৮০৪)

ছবি: সংগৃহীত

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আহলে কোরআনে’র বিশেষ মর্যাদার কথা বলেছেন। তাদেরকে আল্লাহর আহল ও বিশেষ ব্যক্তি বলেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, কিছু মানুষ আল্লাহর আহল বা পরিজন। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, তারা কারা? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তারা হলো আহলে কোরআন; তারা আল্লাহর আহল বা পরিজন ও তার বিশেষ বান্দা। (সুনানে ইবনে মাজা: ২১৫)

হাদিসে উল্লিখিত ‘আহলে কোরআন’ কারা?

যারা কোরআন অধ্যয়ন ও চর্চায় মগ্ন থাকে, কোরআন শেখে, শিখায়, কোরআনের বিধান ও শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে, তাকওয়ার পথ অবলম্বন করে, তারাই হাদিসে উল্লিখিত ‘আহলে কোরআন।’

এসব গুণাবলির অধিকারী কেউ কোরআন হিফজ করলে তার মর্যাদা নিঃসন্দেহে অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি হিফজ না করে, কিন্তু কোরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করে, তাকওয়ার অধিকারী হয়, সেও ‘আহলে কোরআন’ গণ্য হবে।

শুধু কোরআন তিলাওয়াত করলে বা কোরআন হিফজ করলেই কেউ উল্লিখিত আহলে কোরআনের মর্যাদার অধিকারী হবে না যদি কোরআনের বিধিবিধান অনুযায়ী আমল না করে।

ছবি: সংগৃহীত

আমলের পাশাপাশি তিলাওয়াতও গুরুত্বপূর্ণ

আমলের পাশাপাশি কোরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতও ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত নামাজ কোরআন তিলাওয়াত ছাড়া আদায় করা যায় না। নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করা ফরজ। নামাজের বাইরেও কোরআন তিলাওয়াত সর্বোত্তম নফল ইবাদত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। (সুরা ফাতির: ২৯)

ওএফএফ/এমএস