নবিজি (সা.) যখন নবুয়্যত লাভ করেন এবং প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন কোরায়শের নেতৃস্থানীয় অনেকে এটাকে তাদের নেতৃত্ব ও ক্ষমতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। তারা মনে করে, বনু হাশেমের একজন ব্যক্তিকে নবি হিসেবে মেনে নিলে তাকেই নেতা মেনে নিতে হবে এবং বনু হাশেমের ক্ষমতা বেড়ে যাবে, তাদের নেতৃত্ব, ক্ষমতা থাকবে না।
ফলে তারা বিভিন্নভাবে ইসলামের প্রচার প্রসারে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। নিজেদের গোত্রের যারা ইসলাম গ্রহণ করতো, তাদেরকে তারা বন্দী করতো, তাদের ওপর নির্যাতন চালাতো। বিশেষত দাসশ্রেণীর কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতো।
এদের মধ্যে প্রধান ভূমিকায় ছিল বনু মাখজুমের সর্দার আবু জাহল আমর ইবনে হিশাম, বনু আবদে শামসের সর্দার উতবা ইবনে রাবিআ, শাইবা ইবনে রাবিআ, উকবা ইবনে আবু মুয়াইত, বনু জুমাহ গোত্রের সর্দার উমাইয়া ইবনে খালাফ প্রমুখ।
নবিজিকেও (সা.) তারা বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে। শুধু ইসলাম প্রচারে নয়, নবিজিকে (সা.) প্রকাশ্যে নামাজ পড়তেও তারা বাঁধা দিতো। নবিজি (সা.) মাঝে মাঝে কাবার আশপাশে নামাজ পড়তেন, এটা তাদের সহ্য হতো না। হুমকি দিয়ে, গালমন্দ করে তাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করতো।
একদিন তারা চরম সীমালঙ্ঘন করে ফেললো। সেদিন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাবার কাছে নামাজ আদায় করছিলেন। আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা অদূরে বসে ছিল। নবিজিকে (সা.) নামাজ পড়তে দেখে আবু জাহল বললো, কে অমুক গোত্রের উটের নাড়ি-ভুড়ি নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ যখন সিজদায় যাবে, তখন তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে? আবু জাহলের কথায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং ওই নাড়িভুড়ি এনে সিজদারত নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। আর আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো।
ছবি: সংগৃহীত
আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ (রা.) কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন মক্কায় দরিদ্র ও সামাজিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি। মক্কার সর্দারদের মোকাবেলায় তিনি নবিজিকে (সা.) উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে তার কঠিন নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তিনি দেখছিলেন, নবিজি (সা.) সিজদা থেকে মাথা ওঠাতে পারছেন না।
এ সময় কেউ নবিজির (সা.) মেয়ে ফাতেমাকে এই খবর দিল। ফাতেমা (রা.) দৌড়ে এলেন, নবিজির (সা.) কাঁধ থেকে উটের নাড়িভুড়ি ফেলে দিলেন এবং কাফের সর্দারদের দিকে ফিরে তাদের তিরস্কার করলেন।
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে নামাজ শেষ করলেন। তারপর উচ্চৈস্বরে তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আপনার হাতেই কোরায়শের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। নবিজির (সা.) দোয়ার আওয়াজ শুনে কাফেরদের হাসাহাসি বন্ধ হয়ে গেলো। তারা ভয় পেয়ে গেলো। তারা জানতো, নবিজির (সা.) দোয়া কবুল হবেই।
নবিজি (সা.) আরও স্পষ্ট করে বললেন, হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবনে হিশাম, উতবা ইবনে রাবিআ, শাইবা ইবনে রাবিআ, ওয়ালিদ ইবনে উকবা, উমাইয়া ইবনে খালাফ এবং উকবা ইবনে আবু মুআইতের শাস্তির ভার আপনার হাতে ন্যস্ত করলাম।
ছবি: সংগৃহীত
ঘটনাটির বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ যিনি নিজের চোখে ঘটনাটি দেখেছিলেন এবং নবিজিকে (সা.) দোয়া করতে শুনেছিলেন তিনি বলেন, নবিজি (সা.) যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের যুদ্ধের দিন তাদের প্রত্যেকের লাশ আমি দেখেছি। তারা প্রত্যেকেই বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। পরে তাদের লাশগুলো বদরের একটি নোংরা কূপে ফেলে দেওয়া হয়।
সূত্র: সহিহ মুসলিম: ৪৫০০
ওএফএফ/জিকেএস