ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় ও সম্মানিত আম্পায়ার হ্যারল্ড ‘ডিকি’ বার্ড আর নেই। ৯২ বছর বয়সে তিনি নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে ক্রিকেট দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বার্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেন ৬৬ টেস্ট ও ৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচে, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালও। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি ইয়র্কশায়ারের হয়ে ১৯৫৬ সালে ব্যাটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতিও হন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯৩ ম্যাচে ডিকি বার্ড দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেরা ইনিংস ছিল ১৯৫৯ সালে গ্ল্যামরগানের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮১ রান। তবে চোটের কারণে ব্যাটার হিসেবে ক্যারিয়ার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭০ সালে আম্পায়ারিং শুরু করার পর তিনি দ্রুতই ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি চরিত্রে পরিণত হন।
ডিকি বার্ডের নানা অদ্ভুত অভ্যাস তাকে ভিন্নমাত্রায় জনপ্রিয় করে তোলে। ম্যাচ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মাঠে হাজির হয়ে যেতেন, এমনকি একবার ওভালে ম্যাচের আগে সকাল ৬টায় পৌঁছে তালাবদ্ধ গেট টপকানোর চেষ্টাও করেছিলেন!
তার এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত ছিল ক্রিকেটে বহুল আলোচিত। অনেক সময়ই ব্যাটারদের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতেন, যা আজকের ডিআরএস যুগে টিকে যেত না। তবে তিনি ছিলেন নিয়মিত ও ধারাবাহিক— যার ব্যতিক্রম ঘটেছিল হয়তো শেষ টেস্টে, যখন লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে আবেগঘন বিদায়ী দিনে প্রথম ওভারেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক আথারটনকে এলবিডব্লিউ দেন।
১৯৯৫ সালে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অতিরিক্ত রোদ কাচে প্রতিফলিত হওয়ায় খেলা বন্ধ করে দেওয়া, কিংবা ওভারের বল গোনার জন্য পকেটে রাখা মার্বেল মাটিতে পড়ে যাওয়া— এসব ঘটনায় দর্শক ও খেলোয়াড়দের কাছে তিনি ছিলেন রঙিন চরিত্র। এমনকি ইয়ান বোথাম ও অ্যালান ল্যামের নানা মজার প্র্যাঙ্কের শিকারও হয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেটের প্রতি অসামান্য অবদানের জন্য বার্ডকে ১৯৮৬ সালে এমবিই এবং ২০১২ সালে ওবিই খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও ১৯৯৮ সালে ইয়র্কশায়ারের হয়ে শেষবার মাঠে দাঁড়ান আম্পায়ার হিসেবে।
ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাব এক বিবৃতিতে জানায়, ‘তিনি আমাদের সবার জন্য ছিলেন এক অনন্য চরিত্র। তার উত্তরাধিকার কেবল ক্রিকেটেই নয়, খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব, বিনয় আর আনন্দ ছড়িয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।’
আইএইচএস/