নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সেইসঙ্গে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে এসব ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে হত্যকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৫টি। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১১ জন। আর অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৫৭ জনের।
সবশেষ গত ১ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৯টি। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের এবং অপমৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।
এসকল ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ফতুল্লার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মামুনের ৭ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা। গত ১৩ নভেম্বর রূপগঞ্জের কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশের পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টরের এক লেক থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় জসিম উদ্দিন মাসুমের ৭ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত জসিম উদ্দিন মাসুম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার মৃত হাজী আলেক চান বেপারীর ছেলে ও ফতুল্লার চাঁদ ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। এই ঘটনায় রুমা আক্তার ও রুকসানা ওরফে রুকু নামে দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে গত ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১ দিনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ৬ জন, ২২ জনের অপমৃত্যু এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়।
তার আগে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ৭ জন, ১৬ জনের অপমৃত্যু এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ৩ জন, ৯ জনের অপমৃত্যু এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে প্রতিমাসেই মরদেহের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি নুরু উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে প্রশাসনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যার কারণে প্রশাসন এখনও স্থায়ী হতে পারছে না। আর এই সুযোগে অপরাধচক্র নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন সকালে হাঁটতে বের হয় না প্রাণভয়ে। প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে। পাশাপাশি এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা থানা পর্যন্ত পৌঁছায় না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্থানের জন্য প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। তাদেরকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যথায় দিন দিন হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে শিল্প এলাকা। এখানে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন রকমের মানুষ বসবাস করে থাকে। যার কারণে নানা রকমের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে আমরা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যেখানেই কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে থাকি। কোনোভাবেই অপরাধীদের ছাড় দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া আরও কিছু মৃত্যু আছে যেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। যেমন অপমৃত্যুতে সাধারণত আমরা কিছু করতে পারি না। নানা কারণেই এই অপমৃত্যু হয়ে থাকে। এজন্য আমাদের সকলকে সামাজিকভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধেও আমাদের সবাইকে সতর্ক হওয়াটা জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, সকল পর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে আমাদের একটি যৌথ কমিটি করা হয়েছে। যেখানে আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রয়েছেন। সেইসঙ্গে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করেছি। এসকল এলাকায় ছিনতাই, চুরি ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। আশা করছি অতি দ্রুতই এর ফল পাবো।
এফএ/জিকেএস