কয়েকদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও চলছে সরগরম প্রস্তুতি। শহর ও শহরের বাইরের মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে নানা রকম আয়োজন। সেই সঙ্গে প্রতিমা শিল্পীদের হাতে মাটি ও খড়ের কাঠামোয় ফুটে উঠছে দশভুজা দেবীর রূপ।
দিন-রাত এক করে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শিল্পীরা। তুলির আঁচড়ে রঙিন হয়ে উঠছে দেবী দুর্গা, যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে মৃৎশিল্পের প্রতিটি অংশ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এই কর্মযজ্ঞ।
এদিকে এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। পূজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করে আসছেন। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করছেন। সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করছেন। তারা চাচ্ছেন পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত যেন কোথাও কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ জেলাজুড়ে মোট ২২৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৭টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন, আমাদের কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। গতবারের তুলনায় এবার অর্ডারও বেশি এসেছে। সময় কম থাকায় দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে।
দীপক আচার্য্য নামে এক প্রতিমা শিল্পী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকেই এই প্রতিমা তৈরি করে আসছি। আমরা মায়ের বিগ্রহ তৈরি করে থাকি। এবার পূজা এগিয়ে আসছে। এজন্য আমাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি মায়ের প্রতিমা মণ্ডপে মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সহ-সভাপতি জয় কে রায় চৌধুরী বলেন, আমরা যথেষ্ট উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ সম্প্রীতির শহর হওয়ায় আলাদাভাবে নিরাপত্তার প্রয়োজনবোধ কখনই হয়নি। আগের মতই নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের ভূমিকা থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, আনসার, র্যাব ও সেনাবাহিনীর নজরদারি থাকবে পুরো জেলাজুড়ে। প্রায় সাড়ে ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে পূজার নিরাপত্তায়। চার স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি তিনটি ভাগে ভাগ করে মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, উৎসব উপলক্ষে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সবগুলো পূজামণ্ডপে সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করি। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই। এই জেলাতে ২২৪টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু পূজামণ্ডপকে আমরা কিছুটা নজরদারিতে রেখেছি। যাতে কোনো অসাধু ব্যক্তির কোনো অসাধু উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কোনোভাবেই নষ্ট করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, পূজামণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই পুরো কার্যক্রমে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমএন/এমএস