বয়স, সৌন্দর্য, মাতৃত্ব ও শরীর এসব কি নারীর অর্জন না পরিচয়ের মাপকাঠি? না, অর্জন নয়– প্রাপ্তি, কিন্তু সমাজ তা মূল্যায়নের মাধ্যমে বলতে চায় একজন নারী জন্ম থেকে সময়ের নিয়মে বড় হন। এটা তার অর্জন নয়—প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সমাজ নারীর বয়সকে একপ্রকার ‘সময়সীমা’ বা ‘পণ্যদ্রব্যের মেয়াদ’ হিসেবে দেখে—যুবতী হলে ‘লাভজনক’, বৃদ্ধ হলে ‘অপ্রাসঙ্গিক’। অর্থাৎ বয়স নারীকে সমাজে কখনো গ্রহণযোগ্য, কখনো অব্যবহৃত করে তোলে—এটা এক নির্মম পরিচয়ের মাপকাঠি হয়ে ওঠে। সৌন্দর্য আংশিকভাবে প্রাকৃতিক, আংশিকভাবে সমাজ-নির্মিত ধারণা।
একজন নারী তার সৌন্দর্যের জন্য সাধুবাদ পান, অপমান পান, লোভের শিকার হন, যা তাকে সবসময় ‘দেহগত মূল্যায়নের’ কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। সমাজ সৌন্দর্যকে অর্জন মনে করে, কিন্তু আদতে এটা একজন নারীর মানবিক গুণ বা চরিত্রের প্রতিফলন নয়—বরং সমাজের চোখে গ্রহণযোগ্যতা বা বিচারের হাতিয়ার। আবার একজন নারী যদি মা হন, তবে সেটি জীবনের একটি অভিজ্ঞতা—মানবিকতার এক রূপ। কিন্তু সমাজে সেটিকেও একধরনের ‘সফলতা’, ‘পূর্ণতা’ বা নারীত্বের চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে মাতৃত্ব একটি পরিচয়ের পরিপূর্ণতা নয়, হয়ে ওঠে সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার শর্ত। একজন নারী যেমন জন্মগ্রহণ করেন, তার শরীরও তেমনি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে । কিন্তু সমাজ নারীকে শরীর দিয়ে চিহ্নিত করে—শরীরের গঠন, রং, আকৃতি, পোশাক, চলাফেরা—সবকিছু বিশ্লেষণ করে একেকটা পরিচয় চাপিয়ে দেয়। শরীর তখন আর শুধু তার নয়, হয়ে ওঠে সমাজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিচ্ছবি। নারী কি তবে নিজস্ব অর্জন বা পরিচয়ের সুযোগ পায়?
যখন একজন নারী জ্ঞান, কাজ, সাহস, চিন্তা সৃজন দিয়ে নিজেকে গড়ে তোলে অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সমাজ নারীর চিন্তা নয়, দেহকে গুরুত্ব দেয়; তার ভূমিকা নয়, তার শারীরিক গঠনকে মূল্যায়ন করে। নারীর বয়স, সৌন্দর্য, মাতৃত্ব ও শরীর—এসব প্রাপ্তি বা প্রাকৃতিক গুণ মাত্র, কোনো অর্জন নয়। কিন্তু সমাজ একে পরিচয়ের মানদণ্ড বানিয়ে নিয়েছে। এতে নারী নিজেই যেন নিজের ছায়া হয়ে বেঁচে থাকে, নিজের নির্মিত পরিচয়ে নয়—সমাজ-নির্মিত পরিচয়ে। তাই প্রশ্ন ওঠা উচিত: নারী কবে তার চিন্তা, স্বপ্ন, ভাষা, প্রতিরোধ ও স্বাতন্ত্র্যে পরিচিত হবে? কবে নারী হবে তার নিজের পরিচয়ের নির্মাতা?
বয়স শুধু একটি সংখ্যা, রুচি একটি বোধ একথা ক'জন জানে? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই গুণী অভিনেত্রী—জয়া আহসান ও বিপাশা হায়াতকে ঘিরে একটি অদ্ভুত ট্রল কালচারের সাক্ষী হচ্ছি আমরা। তাদের বয়স এক হলেও তাদের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে—এটিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে হাস্যরস, অপমান এবং তথাকথিত সৌন্দর্যের তুলনা। প্রশ্ন হলো এই তুলনাকে আমাদের রুচির পরিচয়, না বরং এক গভীর অবচেতন বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ?
বয়স শুধু একটি সংখ্যা, রুচি একটি বোধ একথা ক'জন জানে? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই গুণী অভিনেত্রী—জয়া আহসান ও বিপাশা হায়াতকে ঘিরে একটি অদ্ভুত ট্রল কালচারের সাক্ষী হচ্ছি আমরা। তাদের বয়স এক হলেও তাদের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে—এটিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে হাস্যরস, অপমান এবং তথাকথিত সৌন্দর্যের তুলনা। প্রশ্ন হলো এই তুলনাকে আমাদের রুচির পরিচয় না বরং এক গভীর অবচেতন বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ?
জয়া আহসান ও বিপাশা হায়াত—দুজনই আমাদের সংস্কৃতির শক্ত দুই স্তম্ভ। একজন বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সিনেমা পাড়ায় নিজের অবস্থান গড়েছেন, অন্যজন দীর্ঘদিন ধরেই নাটক, চিত্রকলা ও মঞ্চনাটকে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছেন। তাদের কাজ, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি—সবকিছুই অনন্য ও স্বতন্ত্র। তাদের বয়স নিয়ে হাস্যরস মানেই বুঝতে হবে সমাজের রূপক থেরাপি!
এই ট্রল কালচার আসলে সমাজের এক মানসিক অসুস্থতা। বয়স বাড়া যে অপরাধ নয়, সেটা ভুলে গিয়ে আমরা নারীকে চিরতরুণী হওয়ার দায় চাপিয়ে দিচ্ছি। মনে রাখা দরকার, বয়স কোনো দুর্বলতা নয়, অভিজ্ঞতা ও পরিণতির পরিচায়ক। একজন নারী তার কোন বয়সে কেমন থাকবেন, তার মুখে ক’টা ভাঁজ থাকবে, সেটা নিয়ে পরিমাপ করার অধিকার কার? সৌন্দর্য কি শুধুই চোখের পাতায় আটকে থাকে? একজন নারী নিজেকে কীভাবে ধারণ করবেন, সেটিই কি সৌন্দর্যের আসল রূপ নয়? ইয়াং লুক বনাম বুড়িয়ে যাওয়া এসব ট্যাগ কি অপমান নয়?
জয়ার ইয়াং লুকের পেছনে তার লাইফস্টাইল, পেশাগত ব্যস্ততা, হয়তো জিনগত সৌভাগ্য কাজ করেছে। বিপাশার মুখে যদি বয়সের ছাপ থাকে, তাও তো জীবনের চিহ্ন—একটি সুস্থ, মাটির কাছাকাছি জীবনযাপনের প্রতিফলন। কেউ হয়তো স্কিনকেয়ার করেন, কেউ করেন না—কিন্তু তা নিয়ে– কে বেশি সুন্দর এই প্রতিযোগিতা তৈরির যৌক্তিকতা কোথায়? এরকম তুলনা শুধু নারীকে অবমূল্যায়নই করে না, সমাজের মধ্যে চির তরুণ থাকার এক অমানবিক চাপ তৈরি করে। এই চাপ শুধু শরীর নিয়ে নয়, বরং মন নিয়েও—যেখানে নারীকে ভাবতে হয়: ‘আমি কি বুড়িয়ে যাচ্ছি? তবে কি সমাজ আমাকে বাতিল করে দেবে?’
কার মুখে বয়স, আর চোখে বিবেক এখান থেকেই মূলত রুচির পরীক্ষা হয়ে যায়। এসব ট্রল মানুষের মুখোশ খুলে দেয়। আমরা হয়তো নিজেদের শিক্ষিত ভাবি, কিন্তু যদি একজন নারীকে শুধু তার মুখের ভাঁজ দেখে বিচার করি, তবে সেই শিক্ষা মূল্যহীন। রুচি একটি বোধ, যা বলে দেয়, কাউকে ছোট করে হাসাহাসি নয়, তার অবস্থান, কাজ ও মূল্যবোধকে সম্মান করায় মানবিকতা। জয়া আহসান এবং বিপাশা হায়াত— তাদের চিন্তা ও সৃষ্টিশীলতা আমাদের গর্বের বিষয় হওয়া উচিত।
সমাজ যদি এখনো নারীর বয়স আর ত্বকের ওপর দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য মাপতে চায়, তাহলে উন্নয়ন নয়, পিছিয়ে যাওয়াই হচ্ছে আমাদের একমাত্র অর্জন। বয়স একটি সংখ্যা, সৌন্দর্য একটা রুচি, আর সম্মান হলো বিবেকের আয়না। তাই আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখ দেখে ভাবুন—আপনি মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছেন তো?
নারীর বয়স, সৌন্দর্য নিয়ে ট্রল খুলে দেয় সমাজের মুখোশ। জয়া-বিপাশা ট্রলের ভেতরের বাস্তবতা হলো একটি অপরিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ট্রল আসলে কেন করা হচ্ছে? জয়ার সৌন্দর্যকে কি আমরা সম্মান করছি, নাকি সেটিকে অন্য একজন নারীর জন্য ‘অপমানের হাতিয়ার’ বানিয়ে দিচ্ছি?
বয়স একটি সংখ্যা না হয়ে বিচারকের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। কিন্তু বয়স প্রকৃতির নিয়মে এগিয়ে চলে। এটি থামানোর নয়, বরং উপলব্ধির বিষয়। একজন নারী ত্রিশ, চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর পার করলেও তার প্রতিটি বছর হয় অভিজ্ঞতার, পরিপক্বতার ও মানবিক পূর্ণতার প্রতিফলন। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীর বয়স যেন ‘তাঁর চেহারার মেয়াদ’, যা একসময় ফুরিয়ে যায়! একজন পুরুষ পঞ্চাশেও ‘হ্যান্ডসাম’, ‘ম্যাচিওর’, ‘সফল’—কিন্তু একজন নারী পঁয়ত্রিশ পার করলেই ‘বুড়িয়ে যাওয়া’ কিংবা ‘সাজিয়ে নিজেকে ধরে রাখা’র কটাক্ষের শিকার হন।
এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু পক্ষপাতদুষ্টই নয়, অত্যন্ত অমানবিক ও চিন্তাহীন। আমাদের চোখে সৌন্দর্য একটা ফিল্টার অথচ এটি আত্মপ্রকাশের রূপ হতে পারে। জয়া আহসান হয়তো তার রূপচর্চা, খাদ্যাভ্যাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা দিয়ে নিজের চেহারায় এক অনবদ্য ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক মানের অভিনেত্রী, তার পেশাগত চাহিদা হয়তো তাকে এমন রেখে চলতেই উৎসাহ দেয়। অন্যদিকে বিপাশা হায়াত চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও একজন মা। তার জীবনেও রয়েছে অভিজ্ঞতার নানা স্তর, ঘরোয়া ও শিল্প-ভুবনের বাস্তবতা। তার মুখে যদি বয়সের ছাপ থাকে, তাহলে সেটা জীবনের গভীরতার চিহ্ন, পরিপক্বতার ছায়া। কিন্তু আমরা কী করছি? একজনের 'ইয়াং লুক' দিয়ে আরেকজনের মুখাবয়বকে নিচু করে দিচ্ছি, তার স্বাভাবিক শারীরিক রূপকে উপহাস করছি।
এতে জয়া আহসানও অপমানিত হচ্ছেন—কারণ তার সৌন্দর্যকে আমরা ‘অন্যকে হার মানানোর হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছি, যা কোনো শিল্পীর কাম্য নয়। আসলে রুচিহীন ট্রল নিজের অক্ষমতা ঢাকার এক নোংরা উপায়। একজন নারী কেমন দেখতে, তার গালে বলিরেখা আছে কি না, ঠোঁট পাতলা না মোটা—এসব বিশ্লেষণ করা যদি সমাজের বিনোদনের উপাদান হয়, তাহলে সেই সমাজ চেহারা ভালো হলেও মনের দিক থেকে ভয়াবহ কুৎসিত। এই ট্রলের ভেতরে লুকিয়ে থাকে নারীর বিরুদ্ধে গোপন প্রতিহিংসা, যা এক ধরনের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, যেখানে নারীর মূল্য তার মুখমণ্ডলে আটকে থাকে, চিন্তায় নয়। এমনকি অনেক নারীও নিজেদের অজান্তে এই ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন—নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, অন্য নারীকে ছোট করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চান। বয়স বা চেহারা নিয়ে উপহাস একটা অন্তঃসারশূন্য সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
এই ট্রল কালচার একটা প্রশ্ন তোলে—আমরা কীভাবে নারীদের দেখি? একজন নারী যখন তরুণ থাকেন, তখন সমাজ তাকে ভোগ্যপণ্য ভাবে। তিনি যখন বয়সে পরিণত হন, তখন তাকে বাতিল পণ্যের মতো দূরে ঠেলে দেয়। অথচ একজন নারী তার জীবনের প্রতিটি ধাপে একটি পূর্ণ মানুষ—কখনো শিল্পী, কখনো মা, কখনো চিন্তক, কখনো প্রতিবাদী কণ্ঠ। জয়া-বিপাশা দুজনই নিজেদের অবস্থানে শক্ত, সফল এবং সাহসী।
তাদের চেহারা নয়, তাদের চিন্তা সৃজন ও মননের গভীরতা আমাদের আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত।
সময় এসেছে, সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার। আজকের পৃথিবীতে সৌন্দর্য আর শুধু বাহ্যিক নয়—বরং এটি এক ধরনের আত্ম-উপস্থাপন, আত্মবিশ্বাস ও মনের ভাষা।
যারা আজ ট্রল করছে, তারা ভুলে গেছে—একজন মানুষকে ছোট করা মানে নিজেকে ছোট করা। বিপাশা হায়াৎ যদি তার পরিণত বয়সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন, তবে সেটাই আধুনিক নারীর সৌন্দর্য। জয়া আহসান যদি বয়সকে অতিক্রম করে নিজেকে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে সেটাও তার অন্যরকম সৌন্দর্য। কিন্তু তাদের কেউই আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। তারা দুজনই একে অপরের সম্পূরক। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও নারীবাদী চেতনার দুই উজ্জ্বল মুখ।
সুন্দর চেহারা অস্থায়ী। সুন্দর চিন্তা চিরস্থায়ী। নারীর মুখ নয়, তার মন যদি সুন্দর হয়—তবেই সে সত্যিকারের আলোকিত মানুষ। আজ জয়া ও বিপাশার মুখ নিয়ে যারা হাসছে, কাল তাদের মুখেই বয়ঃক্রমের রেখা পড়বে। তখন তারা কি নিজেদের মুখ লুকিয়ে রাখবে? নাকি তখন বুঝবে—বয়স নয়, চিন্তাই পরিচয়ের আসল রূপ? সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে নারীর চেহারায় বন্দি থাকবে, নাকি তার সত্তা, শক্তি ও সম্মানকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে।
বয়স পরিচয়ের নয়, অভিজ্ঞতার প্রতীক। একজন নারী চল্লিশে পৌঁছালে তার মুখে বলিরেখা থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক! কিন্তু এই স্বাভাবিকতাকেই আমরা অস্বীকার করে ফেলি যখন সমাজ মনে করে—‘নারী মানেই চিরতরুণী হওয়া উচিত।’ এই মনোভাব আসলে নারীকে চেহারার খাঁচায় বন্দি করে রাখার এক নির্লজ্জ প্রয়াস। জয়া যদি নিজের রূপচর্চা ও পেশাগতভাবে ফিটনেস মেইনটেইন করেন, তাতে বাহবা। বিপাশা যদি একান্তভাবে শিল্প, পরিবার, মাতৃত্ব ও নিজের সহজ-সরল জীবন বেছে নেন, সেটিও তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তাদের কাউকেই অপরজনের মানদণ্ডে মাপা চলে না। কারণ সৌন্দর্য কোনো তুলনার বিষয় নয়। মানুষ ভুলে যায়—সুন্দর মানে একরকম নয়। জয়ার সৌন্দর্য হয়তো শহুরে চটচটে ক্যামেরার সামনে দ্যুতিময়, আর বিপাশার সৌন্দর্য হয়তো পরিণত, প্রশান্ত ও স্থির, যা সময়কে ধারণ করে। একজনকে সম্মান করতে গিয়ে অন্যজনকে ছোট করা, এটা আসলে না কারও প্রশংসা না ন্যায়ের প্রকাশ। এটা কেবলই এক বিষাক্ত রুচির পরিচয়, যেটা নারীকে নারী দিয়ে অপমান করে বিকৃত আনন্দ পাওয়া ছাড়া কিছু নয়!
ট্রলকালচার আসলে আমাদের চিন্তার দৈন্যের প্রতিচ্ছবি। নারীর বয়স নিয়ে কৌতুক করার অর্থ হলো তাকে শুধু ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখা। এতে নারী যেমন অপমানিত হন, তেমনি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আরও একধাপ শক্ত হয়। এই ট্রলের মাধ্যমে আমরা শিখিয়ে দিচ্ছি—
‘তুমি নারী হলে সুন্দর না থাকলে তুমি অযোগ্য, অব্যবহারযোগ্য।’ এই মনোভাব কতটা হীন, তা আমাদের উপলব্ধির সময় এসেছে। জয়া আহসান হোক বা বিপাশা হায়াৎ—তাদের সৌন্দর্য চেহারায় নয়, তাদের কাজ, প্রতিভা, আত্মপ্রকাশ ও ব্যক্তিত্বে। তারা কাউকে হারাতে আসেননি। তারা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। তাদের মুখে বয়সের রেখা থাকতেই পারে, কিন্তু তাদের আত্মার শক্তিতে কোনো ফাটল নেই।
আয়নায় মুখ নয়, নিজের মন দেখুন। আমরা যারা আজ একজন নারীর মুখ দেখে হাসছি,
কাল আমরাও বয়সের কাছে হার মানব। তখন বুঝব—বয়স নয়, চিন্তা-মনন-ভাষা আর সহানুভূতিই মানুষের আসল সৌন্দর্য।
মানুষের চেহারা নিয়ে নয়, তাদের কাজ ও মননের গভীরতা নিয়ে আলোচনা হোক। কারণ নারী কেবল একটি মুখ নয়, একটি পূর্ণ মানুষ।
লেখক : কবিও কথাসাহিত্যিক।
এইচআর/এমএফএ/জিকেএস