নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা যে কারণে জরুরি

আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন আজও এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ঘর, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র — প্রতিদিন অসংখ্য নারী অপমান, মানসিক নিপীড়ন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হন। এসব নির্যাতনের একটি বড় অংশ ঘটে পুরুষের হাতেই, যা সমাজে নিরাপত্তাহীনতা, ভীতি এবং বৈষম্যের গভীর ছাপ ফেলে যায়। তবে এই সহিংসতার চক্র ভাঙতে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। তাই বলা যায়—নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুরুষই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর সহযোগী। নারী নির্যাতন শুধু শারীরিক সহিংসতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর পরিধি আরও বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। মানসিক নির্যাতন, অপমান এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন একজন নারীর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক সুস্থতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যৌন হয়রানি নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সম্মানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। বাল্যবিবাহ নারীর শৈশব, শিক্ষা ও স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেয়, আর কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য তার পেশাগত অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া সমাজে নারীর অবদানকে অবমূল্যায়ন করা এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করাও এক ধরনের নির্যাতন, যা দীর্ঘমেয়াদে

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা যে কারণে জরুরি

আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন আজও এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ঘর, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র — প্রতিদিন অসংখ্য নারী অপমান, মানসিক নিপীড়ন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হন।

এসব নির্যাতনের একটি বড় অংশ ঘটে পুরুষের হাতেই, যা সমাজে নিরাপত্তাহীনতা, ভীতি এবং বৈষম্যের গভীর ছাপ ফেলে যায়। তবে এই সহিংসতার চক্র ভাঙতে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। তাই বলা যায়—নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুরুষই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর সহযোগী।

নারী নির্যাতন শুধু শারীরিক সহিংসতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর পরিধি আরও বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। মানসিক নির্যাতন, অপমান এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন একজন নারীর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক সুস্থতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যৌন হয়রানি নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সম্মানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা যে কারণে জরুরি

বাল্যবিবাহ নারীর শৈশব, শিক্ষা ও স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেয়, আর কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য তার পেশাগত অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া সমাজে নারীর অবদানকে অবমূল্যায়ন করা এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করাও এক ধরনের নির্যাতন, যা দীর্ঘমেয়াদে নারীর আত্মপরিচয় ও অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়। সব মিলিয়ে নারী নির্যাতন একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, যা বিভিন্ন রূপে নারীর জীবনকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৪৯ শতাংশ।

এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এ সময়ে মোট ১৭ হাজার ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এসব পরিসংখ্যান দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় বাধা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি আজ সময়ের দাবি। শুধু আইন প্রণয়ন বা শাস্তির ব্যবস্থা করলেই যথেষ্ট নয়; পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র—সমাজের প্রতিটি স্তরে সম্মান ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা গড়ে তুলতে হবে।

এই পরিবর্তনে পুরুষের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সদাচরণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্বশীল আচরণ এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধারণের মাধ্যমে পুরুষই পারে সমাজের বিদ্যমান দৃশ্যপট পাল্টে দিতে। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সহিংসতার বিরোধিতা জোরদার করে এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাই পুরুষকে সামনে এসে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে — যাতে একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে ওঠে, যেখানে নারী নির্ভয়ে ও সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে।

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা যে কারণে জরুরি

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষের ভূমিকা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংগঠক উমর ফারুক -

তিনি বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সমাজে পুরুষের ভূমিকা সবসময়ই অগ্রগণ্য হওয়া উচিত। পুরুষ চাইলে এই কাজে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। তার আচরণ, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে শক্তিশালী উদাহরণ স্থাপন সম্ভব। নারীর প্রতি সম্মান, সহমর্মিতা ও সমতার মূল্যবোধকে পুরুষের দৈনন্দিন চর্চায় পরিণত করতে হবে।

পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র বা সমাজের যে কোনো স্থানে নারীকে অপমান, অবমাননা কিংবা সহিংসতার শিকার হতে দেখলে নীরব থাকা নয় — সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ জানানোই পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব। একই সঙ্গে ছেলে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই নারীর প্রতি সম্মান, সমতা ও মানবাধিকারের শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি; এটিও পুরুষের একটি বড় দায়িত্ব।

অধ্যাপক উমর ফারুকের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো — নারী নির্যাতন কেবল নারীর সমস্যা নয়; এটি সমগ্র সমাজের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার প্রশ্ন। তাই পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব নয়।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষের করণীয়

১. পরিবার থেকেই শুরু হোক পরিবর্তন

একজন পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে সম্মান করেন, তাহলে সন্তানেরা নারীর প্রতি শ্রদ্ধা শেখে। সেই সঙ্গে মেয়ের জীবনে ছেলের মতো বিনিয়োগ, ভালোবাসা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করলে ‘নারী দুর্বল’ ধারণা ভেঙে যায়।

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা যে কারণে জরুরি

ছেলেকে ছোটবেলা থেকে শেখাতে হবে—‘কান্না দুর্বলতা নয়,’ ‘নারীর না মানেই না,’ এবং ‘শক্তি মানে কাউকে দমন করা নয়; রক্ষা করা।’

২. কণ্ঠস্বর তুলতে হবে পুরুষকেই

কোনো নারীকে হয়রানির শিকার হতে দেখলে নীরব থাকা নির্যাতনকারীর সাহস বাড়ায়। কর্মস্থলে নারী সহকর্মীর প্রতি অসম আচরণ হলে পুরুষ সহকর্মীরা প্রতিবাদ করলে পরিবেশ দ্রুত বদলায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেরা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে বন্ধুদের বোঝালে অসংখ্য নারী নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে।

৩. বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ তৈরিতে পুরুষের ভূমিকা

পুরুষ বস বা প্রশাসকরা নারী কর্মীদের সমান সুযোগ, নিরাপদ পরিবেশ ও সম্মান নিশ্চিত করলে প্রতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি বদলায়। সহকর্মী পুরুষরা নারী সহকর্মীদের মতামত ‍শুনলে এবং অবমাননাকর রসিকতা বন্ধ করলে কর্মপরিবেশ হবে সহযোগিতামূলক।

৪. আইন ও নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা

ভুক্তভোগী নারীকে থানায় যেতে সহায়তা করতে হবে। সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধী বন্ধু বা পরিচিত হলেও তাকে ছাড় দেওয়া যাবেনা।

৫. অনলাইনে পুরুষের দায়িত্ব

ঘৃণামূলক পোস্ট রিপোর্ট করা, নারীবিরোধী কৌতুক বা মিম নিরুৎসাহিত করা, নারীর ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য শেয়ার করা অপরাধ—এটি সবাইকে বোঝানো।

৬. পুরুষ হোক পরিবর্তনের প্রচারক

সচেতনতা কর্মশালায় পুরুষদের অংশগ্রহণ পরিবর্তনের গতি বাড়াবে। পুরুষ আইকন ও সেলিব্রিটিরা বার্তা ছড়ালে তরুণ প্রজন্ম দ্রুত অনুপ্রাণিত হয়। বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা হলে ভুল ধারণা দূর হয়।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ শুধুই নারীর কাজ নয়। পুরুষকেও এগিয়ে আসতে হবে — নিজে সচেতন হয়ে, অন্যকে সচেতন করে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

এএমপি/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow