নারীকে হয়রানির অভিযোগ সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

3 weeks ago 11

ফরিদপুরের মধুখালীতে বিয়ের প্রলোভনে এক নারীর (৪৬) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে অবসরপ্রাপ্ত এক কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সবশেষ তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই নারী।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে মধুখালী উপজেলার গোন্দারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মুন্সি আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন তিনি। শহরের কাঠপট্টিতে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার বর্ণনা ছাড়াও আক্তার হোসেনের অর্জিত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্যাদিও তুলে ধরেন।

ওই নারী জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মধুখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুন্সি আক্তারুজ্জামান। এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। শেখ হাসিনার আমলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করে দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন। বর্তমানে তার মধুখালীতে অন্তত দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি চারতলা ভবন, ঢাকার মোহাম্মদপুর আদাবরে জয় নামে ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি পাঁচতলা বাড়ি, মিরপুর ২ নম্বরে চিড়িয়াখানা রোডে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি, প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের ৫০ একর জমি ছাড়াও দুটি মাইক্রোবাসসহ আরও সম্পদ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। আক্তারুজ্জামানের লাইসেন্স করা একটি পিস্তল রয়েছে, যা তিনি ভয়ভীতি দেখাতে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি মধুখালী উপজেলায়। একই উপজেলার গোন্দারদিয়া গ্রামের মুন্সি আক্তার হোসেন আমার দূর সম্পর্কের চাচা হন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে পরিচয় ও সম্পর্ক। বেশ কয়েকবছর আগে আমার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর আমি মধুখালীতে বাবার বাড়ি চলে আসি এবং স্থানীয় একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান ম্যানেজার পদে চাকরি নেই। একটি ছেলেও রয়েছে আমার। তবে বর্তমানে সে বাইরে থেকে পড়াশোনা করছে। বাড়িতে আমি আর আমার মা ছাড়া আর কেউ থাকে না। একজন পুরুষ মানুষও নেই। ভাইয়েরাও দেশের বাইরে থাকে। দূর সম্পর্কের আত্মিয়তার সুবাদে এই সুযোগ নিয়ে আক্তারুজ্জামান আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে বিয়ে করবেন, একটি বাড়ি লিখে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন আক্তারুজ্জামান। কিন্তু যখন বুঝতে পারি যে, তিনি একজন খারাপ আর দুশ্চরিত্রের লোক, তখন থেকেই আর তাকে কোনো সুযোগ দেইনি। কিন্তু তারপর থেকে উনি আমার একটার পর একটা ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন। অনেক টাকা পয়সার মালিক হওয়ায় অন্যরাও তাকে কিছু বলার সাহস পান না।’

ওই নারী সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আক্তারুজ্জামান ঘনিষ্ঠ সময় কাটানোর তার অজ্ঞাতে কিছু ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন। সেই ছবি ও ভিডিও তার অফিসে পাঠিয়ে সম্মানহানি করা হয়। সবশেষ বুধবার (২০ আগস্ট) তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুইবার পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেন ওই নারী।

এসব বিষয়ে জানতে মুন্সি আক্তারুজ্জামানের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিতেই তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি এখন বিএনপির কোনো পদে না থাকলেও এলাকায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান। তবে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর কল রিসিভ করেননি।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এন কে বি নয়ন/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article