রাজস্থানের সোনাঝরা বিকেলে এক নারীর মুখে লাল ওড়নার আভা ছুঁয়ে গেল সূর্যের আলো। চোখে আত্মবিশ্বাস, ঠোঁটে প্রশান্ত হাসি আর লেহেঙ্গার প্রতিটি সুতায় লুকিয়ে আছে নারীশক্তির গল্প। কবিতার কণ্ঠে ভর করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সেই নারী নায়াব মিধা এবার নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় লিখলেন।

নায়াব সব সময়ই নিজের মতো করে বাঁচতে ভালোবাসেন। তিনি যেমন কবিতায় বলেন মনের কথা, তেমনি জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তেও রাখেন নিজের দর্শনের ছোঁয়া। তাই বিয়ের পোশাকও তিনি বেছে নিয়েছেন একেবারেই ভিন্নভাবে; ফ্যাশনের জন্য নয়, বরং এক অর্থবহ বার্তার জন্য।

নায়াবের বিয়ের লেহেঙ্গা রাজস্থানের স্থানীয় নারীদের হাতে তৈরি। একদম ঐতিহ্যবাহী কাজের লাল লেহেঙ্গা যার প্রতিটি সেলাই যেন রাজস্থানের মরুভূমির মতো গর্বিত, শক্তিশালী এবং গভীর। এই লেহেঙ্গা বানানো হয়েছিল নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার মাধ্যমে, যাতে স্থানীয় কারিগর নারীরা তাদের দক্ষতা ও শ্রমের ন্যায্যমূল্য পান।

নায়াব নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি চাইছিলাম আমার বিয়ের সাজ শুধু আমার না, অনেক নারীর হাসির কারণ হোক।’

এই লেহেঙ্গার মাধ্যমে সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে। ঐতিহ্য ও সচেতনতার এই মেলবন্ধনেই হয়তো লুকিয়ে আছে তার সৌন্দর্যের আসল রহস্য।

নায়াবের গলায় ভারি নেকলেস, কপালে টিকলি, হাতে চুড়ির ঝনঝন সবই রাজস্থানি ঐতিহ্যের প্রতীক। তবে এই সাজে একটুও বাড়াবাড়ি নেই। তার প্রতিটি গয়না যেন তার কণ্ঠের কবিতার মতো নরম, গভীর আর মানানসই। গোলাপি লালের সঙ্গে সোনালি কারুকাজের এই মিশ্রণে ফুটে উঠেছে রাজকীয় অথচ মানবিক এক রূপ।

নায়াবের বিয়ের লাল রঙ শুধু ঐতিহ্যের প্রতীক নয়; এটি তার আত্মবিশ্বাস ও সাহসের রঙও বটে। তিনি এমন এক নারী, যিনি প্রথা ভেঙে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন আয়ুশকে। সেই নারীর সাজে তাই লাল শুধু প্রেম নয়, প্রতিজ্ঞারও প্রতীক।

লাল লেহেঙ্গা, সোনালি বর্ডারে সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি আর তার ওপরে ঝুলে থাকা ওড়না সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত কবিতা-যা বলে, সৌন্দর্য মানে শুধু রূপ নয়, নিজের প্রতি শ্রদ্ধা।

নায়াব ও আয়ুশের বিয়ে যেমন ভালোবাসার, তেমনি দায়িত্বেরও উৎসব ছিল। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে প্রতিটি উপকরণেই ছিল পরিবেশবান্ধব চিন্তা। কৃত্রিম ফুল নয়, সাজে ছিল প্রকৃতির ছোঁয়া; প্লাস্টিকের কোনো ব্যবহার ছিল না। এমনকি নায়াবের সাজের অনেক গয়নাও ছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য ডিজাইনে তৈরি।

ছবিতে দেখা যায় নায়াবের মুখে প্রশান্ত এক হাসি, চোখে লজ্জা নয় বরং শান্ত আত্মবিশ্বাস। যেন বলছে, তিনি শুধু বধূ নন, তিনি এক গল্পকার-যিনি ভালোবাসার গল্প নিজেই লেখেন, নিজের মতো করে সাজেন।

নায়াব মিধার বিয়ের সাজ তাই শুধু সৌন্দর্যের উদযাপন নয়; এটি একজন সচেতন ও সাহসী নারীর প্রতীক, যিনি ঐতিহ্যকে ভালোবেসে আধুনিকতার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন এক নতুন সংজ্ঞায়।
জেএস/

6 hours ago
6









English (US) ·