নিঃস্ব অসংখ্য পরিবার, লিবিয়ায় গিয়ে খোঁজ মেলে না যুবকদের

3 hours ago 3

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের হোসেনের হাট গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম মুন্সি (৩৮)। তার আরেকটি পরিচয় তিনি দালাল। টাকা নিয়ে যুবকদের বিদেশে পাঠান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুবকদের লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে টাকা আদায় করেন তিনি। এভাবে বহু যুবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

একাধিক ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের বহু যুবককে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখান আবুল কালাম মুন্সি। প্রথমে তাদের সঙ্গে ১৪-১৬ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। সেই চুক্তির টাকা দেওয়ার পর তাদের কয়েকটি দেশ ঘুরিয়ে নেওয়া হয় লিবিয়ায়। পরে সেখানে সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাদের।

লিবিয়ার দালাল ও মাফিয়াচক্র মিলে ওই যুবকদের ওপর নির্যাতন চালায়। সেই নির্যাতনের ভিডিও ভুক্তভোগীদের পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এমনকি পরিবার মুক্তিপণ দিতে রাজি না হলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। এসব ঘটনায় দালাল আবুল কালাম মুন্সির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও জামিন নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের আব্দুল রহিম মুন্সির ছেলে মাসুম মোল্লা (২০)। তিনি এক বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় ১৪ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন দালাল আবুল কালাম মুন্সির সঙ্গে। চুক্তির টাকা দেওয়ার পর তাকে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। লিবিয়ায় নেওয়ার পর মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাকে। এরপর তার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

মুখে গামছা বেঁধে মাসুম মোল্লাকে নির্যাতন করার ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। এরপর পরিবারের কাছে নেওয়া হয় আরও ২০ লাখ টাকা। এভাবে কয়েক দফায় দালালদের টাকা দেওয়া হয়। এতকিছুর পরও তিন মাস ধরে নিখোঁজ আছেন মাসুম মোল্লা। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, তাও জানেন না তার পরিবারের লোকজন।

নিখোঁজ মাসুম মুন্সির বাবা আব্দুল রহিম মুন্সি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে দালাল আবুল কালাম মুন্সি। আমার ভিটেমাটি যা ছিল সব বিক্রি করে এদের ৫১ লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরও আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে জানি না। আমরা এর বিচার চাই।’

একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সোহেল আহমেদ (২৫) ১৪ মাস আগে ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন। টাকার জন্য তার ওপরও চালানো হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। তার পরিবারও দালাল চক্রকে কয়েক দফায় ৫১ লাখ টাকা দিয়েছে। তবে সন্ধান নেই সোহেলের।

নিখোঁজ সোহেল আহমেদের ভাই বিএম রুবেল বলেন, ‘আমরা দালাল আবু কালামের বিচার চাই। আমার ভাইদের সন্ধান চাই। সে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে। সে আমাদের নিয়ে টাকার ব্যবসা করে। শিবচর শহরে ও ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। আমি তার বিচার চাই।’

আরেক ইতালী প্রত্যাশী একই গ্রামের মৃত আহম্মেদ মোল্লার ছেলে সোহাগ মোল্লাও (২৪) একই দালালের কাছে জিম্মি দশায় থেকে মুক্ত হতে তার পরিবারকে দিতে হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। বর্তমানে তারও কোন সন্ধান নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা বিএম রাসেল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ৫০ জন যুবক দালাল আবুল কালামের কাছে টাকা দিয়েছিলেন ইতালি যাওয়ার জন্য। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে একেক জনের কাছ থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা নিলেও বেশিরভাগ যুবকের সঙ্গেই পরিবারের যোগাযোগ নেই। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও তারা জানে না। এই দালালের প্রলোভনে পড়ে অনেকেই নিজের শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আবুল কালাম মুন্সির বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, খুব শিগগির এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবপাচারের মামলায় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি বলে আমি করি।

এসআর/জেআইএম

Read Entire Article