দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার একদিন পরই বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। প্রথম কর্মদিবসেই নিজের ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার আগে তার ‘দুর্নীতির’ একাধিক অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযোগগুলো যদি ভাইরাল হয়ে থাকে, আপনারা কেন তদন্ত করছেন না।’
আবদুল মোমেন বাংলাদেশ বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুগ্ম সচিব থাকার সময় ২০০৯ সালে তাকে ওএসডি করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৩ সালের ৬ জুন পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক অবসরে। বিমান ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন বলেন, যে অভিযোগগুলো আছে সেগুলো দুদকে এসেছে ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এসব অভিযোগের ওপর বহু তদন্ত হয়েছে। ২০২৩ সালেও অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়নি, তার প্রত্যয়ন দুদকই করেছে। এটি কিন্তু ৫ আগস্টের পরে নয়, আরও অনেক আগের।
আরও পড়ুন
- রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবো
- দুদকের নতুন চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন
- দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল: আসিফ নজরুল
এসব অভিযোগে দুদকে খোদ নিজের হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে সংস্থাটির নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ সালের তদন্ত যদি ২০২৩ সালে শেষ হয়, এটিই তো হয়রানি।
বর্তমান কমিশন দুদকের হয়রানি ও মামলাজট কমাতে পারবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ শুরু করতে দিন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করবো হয়রানি কমাতে পেরেছি কি না, তদন্তে গতি আনতে পেরেছি কি না, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পেরেছি কি না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশ নবজন্ম পেয়েছে। ৫ আগস্টের পরের ও আগের বাংলাদেশের প্রত্যাশা একরকম নয়। যে আন্দোলন থেকে নব বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেটি ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যের সূচনা মূলত দুর্নীতিতে। দুর্নীতি কমাতে পারলে বৈষম্যও কমে যাবে।
আগের কমিশন পদত্যাগ করার পর গত ৪২ দিন ধরে কমিশন না থাকলেও দুদক পিছিয়ে থাকেনি উল্লেখ করে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, নতুন কমিশন জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে। যেসব বিষয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা এই কাজগুলো করেছেন তারা যেন শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান; সেটি আমরা যথাযথভাবে করার চেষ্টা করবো।
‘শেষ পর্যন্ত যেন এমন না হয়, আমরা একটি অসমাপ্ত তদন্ত, বায়াজড তদন্ত, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে কাজ করছি। সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো। এই সময়ে জনপ্রত্যাশা, রাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা; আমরা খানিকটা হলেও তা পূরণ করতে পারবো।’
বিভিন্ন সময়ে দুদকের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে অনেক কথা ও সমালোচনা আছে জানিয়ে আবদুল মোমেন সাংবাদিকের বলেন, দুদক এই সমাজের একটি অংশ। সমাজ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে দুদকও খানিকটা দুর্নীতিগ্রস্ত হতেও পারে। এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো। আমাদের যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা ন্যায়নিষ্ঠভাবে আপনারা দেখবেন।
আরও পড়ুন
- দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ চায় টিআইবি
- ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দুদকে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন
গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ।
আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন নতুন কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। এসময় তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত যদি আমরা ঠিকমত করে দিতে পারি তবেই বিচারকরা ন্যায়বিচার দিতে পারবেন। এখানে বিচারককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। বিচারকের একক কৃতিত্ব নেই। বিচারের পেছনে তদন্ত হচ্ছে ফাউন্ডেশন। তদন্ত নিরপেক্ষ হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
তিনি সাংবাদিকের বলেন, আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার আমাদের অনেক বিজ্ঞজনের মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন। আমাদের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নজরে এলে নিসঙ্কোচে বলবেন।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। এরপর টানা ৪২ দিন কমিশনারশূন্য ছিল সংস্থাটি।
এসএম/এমকেআর/জিকেএস