ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ২২ দলের মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে দলগুলোকে ডেকে ত্রুটি থাকলে সেটি ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করে দিতে বলেছে ইসি।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি নিবন্ধন প্রত্যাশী নতুন দলের প্রতিনিধিরা ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঙ্গে দেখা করেন। এসব দলগুলোকে টেলিফোন করে কমিশনে আসতে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ২২টি দলের তথ্য যাচাইয়ের জন্য মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। সবগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। কমিশন নতুন দলকে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে নেই। পরবর্তী সময়ে যাতে দোষারোপ করতে না পারে তাই দলগুলোকে আবার ডেকে তাদের কথা শোনা হচ্ছে। সব দলকেই ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ যারা এসেছিলেন তাদের কোনো ঘাটতি থাকলে তা দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তা আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়েছে।
মাঠপর্যায় থেকে আসা তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক দলের কার্যালয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে কমিশন মনে করছে মাঠপর্যায়ের দেওয়া প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য এসেছে কি না- তা দলগুলোকে জানানো প্রয়োজন। দলগুলোকে মৌখিকভাবে ডাকার ক্ষেত্রে কমিশন দুইটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। একটি জেলা, উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ের স্থাপনা এবং অন্যটি হলো দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদনের কমিশনের সন্দেহ থাকায় মাঠপর্যায়ের তথ্য সঠিক আছে কি না- তা যাচাইয়ের জন্য দলগুলোকে ডেকে কমিশন মতামত নিলো। যেন পরবর্তী সময়ে কেউ নিবন্ধন না পেলেও কমিশনকে দোষারোপ করতে না পারে।
- আরও পড়ুন
- ইসিতে দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ, এনসিপিসহ আলোচনায় যারা
- মনে কষ্ট হলেও সমঝোতায় আসুন, রাজনীতিবিদদের প্রধান উপদেষ্টা
ইসির শুনানিতে যেসব দল অংশ নিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), আম জনতার দল, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি), বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জাতীয় জনতা পার্টি (ওসমানী), মৌলিক বাংলা, জনতার দল, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), ফরওয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশের কমিনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি প্রভৃতি।
ইসিতে এসে অনেকে মাঠপর্যায়ে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেন, গ্রাম এলাকায় অফিস ভাড়ার ক্ষেত্রে মালিকেরা ভাড়ার চুক্তিপত্র করতে রাজি হন না। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তে যাওয়ার আগে ইসির কর্মকর্তারা তাদের অবহিত করেননি। গ্রাম এলাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা সবসময় অফিসে থাকেন না। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, দলীয় কার্যক্রম নিয়ে বাইরে ব্যস্ত থাকেন। তাই সবসময় তাদের দলীয় কার্যালয়ে পাওয়া যায় না।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলোর কাগজপত্র বাছাই করে। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর তথ্যাবলী মাঠপর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে মনোনীত দলগুলোর বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে দাবি-আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে কমিশন। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয় সংস্থাটি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ দলীয় প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে না।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
এমওএস/কেএসআর/জিকেএস