নির্বাচন বানচাল নয়, জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমাদের আন্দোলন : হামিদুর রহমান
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, কেউ কেউ বলেন আমরা নাকি নির্বাচন বানচাল করতে চাই। যারা সংস্কার মানে না, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না ও পিআর পদ্ধতি মানে না, প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল নয়, জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সংস্কার কমিশন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে সে জন্যই আমাদের আন্দোলন।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে রেজিস্ট্রারি মাঠে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াতের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের কাজ শেষ হয়নি। আমরা শেষ করার জন্য দাবি জানিয়ে এই সংস্কার কমিশনের দুইবার মেয়াদ শেষ হয়েছে, দুইবার এক্সটেনশন হয়েছে। কেউ কেউ বলে আমরা নাকি নির্বাচন বানচাল করতে চাই সংস্কার কমিশনের টেবিলের আলোচনাকে আমরা রাজপথে নিয়ে এসেছি। আমরা বলতে চায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যে সংস্কার কমিশন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য আমরা জনগণের কাছাকাছি আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি। এটা সংস্কারের বাধা নয়। এটা সংস্কারকে পরিপূর্ণ করার জন্যই কর্মসূচি। নির্বাচন বানচাল আমরা করতে চাই না।
তিনি বলেন, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র দিয়েছে, ৫ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে। কিন্তু জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণের পরিবর্তে বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা সরকারকে বলেছি, জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবেন, কিন্তু আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখিনি। সংস্কার আমাদের দলীয় অ্যাজেন্ডা নয়, সরকার জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন। সংস্কার না করা হচ্ছে জুলাই স্পিরিটকে প্রত্যাখ্যান করা।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, পিআর পদ্ধতির কথা উনারা মানেন না, সংস্কারও মানেন না, আইনি ভিত্তি উনারা চান না। তাহলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কীভাবে করবে? সেই শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচন? দিনের ভোট রাতে? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠনের আগেই ১৫৩ জন নির্বাচিত। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন!
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলতে চাই জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই অপশাসনের কবর রচিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে কাক হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে আজ দিনের ভোট রাতে করা, কেন্দ্র দখল করা, ব্যালট বক্স ছিনতাই করে, মাস্তানি করে, কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে যেনতেন নির্বাচন করবেন সেই নির্বাচন ১৮ কোটি মানুষ তা প্রতিহত করবে।
সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন যদি চান তাহলে সংস্কারকে আইনি ভিত্তিতে দেন। সেই সংস্কারকৃত আইনি ভিত্তিতেই নির্বাচন করুন। আসনভিত্তিক নমিনেশন এটা বাতিল করেন এই ব্যর্থ হয়েছে গত ৫৪ বছর। বিশ্বের যেখানে সফল নির্বাচন হয়েছে সেখানে পিআর পদ্ধতি আছে। বাংলাদেশেও সেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন হবে।
এ সময় তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান? পিআর পদ্ধতি চান? দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে রাজপথে আন্দোলন করে আমাদের দাবি আদায় করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার টেবিলে সমাধান হোক সেটি আমরা চাই, যদি সেখানে সমাধান না হয় তবে রাজপথে জনগণ সমাধান দেবে। আমরা এটাও বলেছি সমাধান যদি আমরা না করতে পারি তাহলে গণভোটে যান। জনগণই ফয়সালা করবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি বলেন, সরকার সংস্কার শুরু করেছেন, প্রথমে ১১টি কমিশন, পরে ৬টি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৩ মাস ধরে বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে বিশেষ একটি দলের হস্তক্ষেপে সংস্কার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশে ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হয়েছে। সুতরাং আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেওয়া হবে না। জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ জাতি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের দাবি পূরণ করেই ছাড়বে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমির ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাসুক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা আমির নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান পয়েন্ট প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের হাজার হাজার জনশক্তি খণ্ড খণ্ড মিছিলসহকারে অংশ নেন।