নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ইসিকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দলগুলোর
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত সংলাপে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। সংলাপে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি। অবৈধ ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আচরণবিধিতে প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুন ও পলিথিন-পিভিসি সামগ্রী নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জনগণের কাছে পৌঁছাতে পোস্টার-ব্যানার কার্যকর প্রচারণার হাতিয়ার, যা ছাড়া অনেক এলাকায় জনসংযোগ কঠিন হয়ে যায়। তাই এগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না বলে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনে করে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সংবিধানের ১৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণীত হয়নি, যা কমিশনকে শক্তিশালী করার পথে বড় ঘাটতি। এ আইন দ্রুত পাস করে কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সাংবিধানিক কর
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত সংলাপে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
সংলাপে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি। অবৈধ ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আচরণবিধিতে প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুন ও পলিথিন-পিভিসি সামগ্রী নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জনগণের কাছে পৌঁছাতে পোস্টার-ব্যানার কার্যকর প্রচারণার হাতিয়ার, যা ছাড়া অনেক এলাকায় জনসংযোগ কঠিন হয়ে যায়। তাই এগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না বলে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনে করে।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সংবিধানের ১৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণীত হয়নি, যা কমিশনকে শক্তিশালী করার পথে বড় ঘাটতি। এ আইন দ্রুত পাস করে কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সাংবিধানিক করতে হবে। পাশাপাশি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করে নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধান সংস্কার জরুরি। এমন পরিষদ থাকলে মাসব্যাপী সংলাপের প্রয়োজন পড়তো না।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে দলগুলোকে আচরণবিধি মানানো হবে কীভাবে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের নজির অতীতে নেই। তাই কমিশনের কঠোর ক্ষমতা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য যদি দু-চারজনের প্রার্থিতা বাতিল করা যায়, তাহলে বাকিদের মধ্যেও শৃঙ্খলা তৈরি হবে।
পোস্টারের বিষয়ে তিনি বলেন, বড় দলের প্রচারের জন্য পোস্টারের দরকার হয় না, কিন্তু ছোট দলগুলো পরিচিতির অভাবে পোস্টারের ওপরই নির্ভরশীল। তাই পোস্টারের বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এছাড়া দলীয় এজেন্ট ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্ভব। কারণ বড় দলের মানুষই সাধারণত ভেতরে প্রভাব বিস্তার করে এবং ছোট দলের এজেন্টরা প্রবেশাধিকার পায় না।
দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আব্দুল মান্নান বলেন, এসব কেন্দ্রে পুলিশ থাকে না এবং সেনাবাহিনীও কেন্দ্র পাহারা না দিয়ে সাধারণত বাইরে অবস্থান করে। বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, অন্যথায় নিখুঁত নির্বাচন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন চিহ্নিত করা সহজ। তাই লক্ষ্য হওয়া উচিত লঙ্ঘন যেন না ঘটে বা কম ঘটে। আচরণবিধির ব্যাপক প্রচার, সামাজিক মাধ্যম নজরদারি ও লঙ্ঘন শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু ডিজিটাল যুগে জনগণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ নাবিকের মতো এগোচ্ছি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত
ইসির সংলাপে ইবরাহিম থাকায় ১২ দলের নিন্দা, কল্যাণ পার্টির প্রতিবাদ
নতজানু হবেন না, নিরপেক্ষ ও শক্ত ভূমিকা নিন: ইসিকে ৬ দল
প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের বিষয়ে মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ৪০ লাখের বেশি প্রবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে অনাস্থা ও অবিশ্বাস থাকায় পোস্টাল ব্যালটের নিরাপত্তা ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধ করতে দ্রুত ফ্যাক্ট-চেকিং ও সঠিক তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে। যাতে নির্বাচনে বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্যের বিস্তার রোধ করা যায়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, যার ফলে সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি আস্থা ক্রমেই কমে গেছে। জনগণ এখন প্রশ্ন তোলে- কেন ভোট দেব, ভোট দিয়ে কী হবে? নির্বাচনের প্রতি এই অনাস্থা জাতির জন্য উদ্বেগজনক, কারণ গণভোট ও মানুষের ভোটাধিকারকে সামনে রেখেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারা আমাদের সবার ব্যর্থতা। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করছে। একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আজ সময়ের দাবি এবং এর মাধ্যমেই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
এসময় নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিশনের বার্তা স্পষ্ট- আইন লঙ্ঘন করলে কেউই পার পাবেন না এবং কোনো বিষয়ে কমিশন আপস করবে না। আরপিও, আচরণবিধি ও সংশ্লিষ্ট আইন শক্তিশালী করে কমিশন এখন কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। মাঠপর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম, মনিটরিং টিম, আইনশৃঙ্খলা সেল, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি টিম ও কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে। প্রতিটি আসনে দুই দল জুডিশিয়াল অফিসার কাজ করবেন। জুডিশিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা তাৎক্ষণিক বিচার এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজনে একটি পুরো আসনের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাও প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করতে পারবেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না। এ বিষয়েও কমিশন কঠোর থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রচারণায় পোস্টার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
আরেক নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবার আচরণবিধিকে প্রথমবারের মতো সরাসরি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে আচরণবিধি ভঙ্গ এখন নির্বাচনপূর্ব অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রার্থিতা বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট সব শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তাই রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মানাতে অঙ্গীকারনামা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। এটি এক ধরনের স্মারক ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উপায়।
তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এবং গোলাবারুদের ৭৩ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে। ক্রস-বর্ডার অস্ত্র প্রবাহ ঠেকাতে বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নয়, এটি গোটা জাতির বিষয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সবার সহযোগিতা অপরিহার্য। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠিন হলেও জাতি একসঙ্গে দাঁড়ালে সফলতা সম্ভব, যেমন শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেপাল-শ্রীলঙ্কার মতো দেশ পারলে বাংলাদেশও পারবে। কেন্দ্র দখল প্রতিহত করা ও আচরণবিধি মানা রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যত ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন, ঝড় আসুক না কেন, আমরা এটা মোকাবিলা করে একটা সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমাদের পক্ষ থেকে নেব। এক্ষেত্রে আপনাদের (দলগুলোর) সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।’
এমওএস/একিউএফ/জেআইএম
What's Your Reaction?