বরিশালের বাবুগঞ্জে নির্মাণের ৭ বছর পরও চালু হয়নি সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল। হোস্টেল দুটি পরিত্যক্ত থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এর মধ্যে একটি হোস্টেলে চুরির দোহাই দিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের একজন স্টাফ ও পার্শ্ববর্তী ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের একজন তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ বসবাস করছেন।
২০১৮ সালে দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কলেজ গেট সংলগ্ন স্থানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল (বালক) ও খানপুরায় রাশেদ খান মেনন স্কুল কম্পাউন্ডে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল (বালিকা) নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও হোস্টেল দুটি চালু হয়নি। এদিকে হোস্টেল দুটির দায়িত্বে থাকা জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের কাছে নেই তেমন কোনো তথ্য। তারাও ভালো করে বলতে পারেন না হোস্টেল দুটির নির্মাণ ব্যয় ও নির্মাণসাল। তবে তারা বলছেন বরাদ্দ না থাকা ও জনবল সংকটের কারণে হোস্টেল দু’টি চালু করা যাচ্ছে না।
- আরও পড়ুন
- ভবন থাকলেও ৬ বছরে চালু হয়নি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়
- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও বাহার যেভাবে সফল
সরেজমিনে হোস্টেল দুটি ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কলেজ গেট সংলগ্ন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল (বালক) নির্মাণের পর থেকেই প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। ভবনের ভেতরে বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। ফটকের লাইটগুলো ভেঙে পড়ে আছে। আসবাবপত্রগুলো এখন ব্যবহার উপযোগী নেই। এর প্রধান ফটক শেষ কবে খোলা হয়েছিল তা বলতে পারেনি কেউ।
ফ্যাসিস্ট সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সমাজসেবা অধিদফতরকে কিছু না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নিজ এলাকায় পৃথক দুটি (বালক, বালিকা) ২০ শয্যার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল নির্মাণ করেন। হোস্টেল দুটিতে এখন পর্যন্ত কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দিয়ে রেখেছেন। তবে সমাজসেবা অধিদফতরকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে তারা বরাদ্দ ও জনবল নিয়োগ দিলে হোস্টেল দুটি চালু করা হবে।
অপর হোস্টেল খানপুরায় রাশেদ খান মেনন স্কুল কম্পাউন্ডে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল (বালিকা) গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচতলা ও দোতলায় দুটি পরিবার (সমাজসেবা অধিদফতরের একজন স্টাফ ও পার্শ্ববর্তী ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের একজন তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ) বসবাস করছেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগে এই হোস্টেলে চুরি হয়েছে, পাশাপাশি রাত হলে মাদকসেবীর আড্ডা জমে। তাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে তারা পাহারাদার হিসেবে বসবাস করছেন।
ভবনের নিচতলা ও দোতলায় দুটি পরিবার (সমাজসেবা অধিদফতরের একজন স্টাফ ও পার্শ্ববর্তী ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের একজন তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ) বসবাস করছেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগে এই হোস্টেলে চুরি হয়েছে, পাশাপাশি রাত হলে মাদকসেবীর আড্ডা জমে। তাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে তারা পাহারাদার হিসেবে বসবাস করছেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (প্রতিষ্ঠান দুটির রিসোর্স শিক্ষক, দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান দুটিতে একজন করে রিসোর্স শিক্ষক, একজন করে অফিস সহকারীসহ মোট ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এছাড়া আর কোনো জনবল নেই। তাছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে উপরের কোনো নির্দেশনা নেই। বরাদ্দ ও জনবল পেলে প্রতিষ্ঠান দু’টি চালু করা সম্ভব।
নির্মাণের ৭ বছর পরও চালু হয়নি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দুই হোস্টেল
- আরও পড়ুন
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ও অন্ধত্বের লড়াইয়ে নেতৃত্বে থাকবে বাংলাদেশ
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ
বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ কে এম আখতারুজ্জামান মামুন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সমাজসেবা অধিদফতরকে কিছু না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নিজ এলাকায় পৃথক দুটি (বালক, বালিকা) ২০ শয্যার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল নির্মাণ করেন। হোস্টেল দুটিতে এখন পর্যন্ত কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দিয়ে রেখেছেন। তবে সমাজসেবা অধিদফতরকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে তারা বরাদ্দ ও জনবল নিয়োগ দিলে হোস্টেল দুটি চালু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, হোস্টেল দুটিতে যদি কেউ বসবাস করে থাকে তা খোঁজ নিয়ে দ্রুত তাদের নামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এইচআরএস/এসএইচএস/জিকেএস