নীতি-আদর্শ-শৃঙ্খলা দেখে হিন্দু হয়েও শিবিরের প্যানেলে এসেছি

2 hours ago 2

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রথম থেকেই কৌশলী ইসলামী ছাত্রশিবির। ‘ইনক্লুসিভ’ প্যানেল গড়তে তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদেরও প্রার্থী করছে। ডাকসুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সর্বমিত্র চাকমার পর এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে প্যানেলে রেখেছে শিবির। এ নিয়ে চলছে আলোচনা।

‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে রাকসু নির্বাচনে যে প্যানেল ঘোষণা করেছে শিবির, তাতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়ছেন সুজন চন্দ্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। দিনাজপুরের ছেলে সুজন আসন্ন রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আল-আমিন হাসান আদিব

জাগো নিউজ: ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করার কারণ কী? শিবির আপনাকে প্রস্তাব দিয়েছিল, নাকি আগে থেকেই তাদের প্যানেলে যাওয়ার আগ্রহ ছিল? এক কথায় সেতুবন্ধটা কীভাবে হলো?

সুজন চন্দ্র: ছাত্রশিবিরের বড় ভাইয়েরা আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিলেন বা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ভেবে-চিন্তে আমি রাজি হই। শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে রাকসু নির্বাচন করার কারণ হলো—তাদের আদর্শ ও নীতিবোধ। তারা সব সময় মানবিক মূল্যবোধ, শিক্ষাবান্ধব কার্যক্রম ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সংগঠনকে সামনে রেখে কাজ করে। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের দায়বদ্ধতা আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সব দিক বিবেচনা করে আমি এ প্যানেলে এসেছি। এ পর্যন্ত সবাই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন। কেউ আমাকে কটুকথা বলেনি। তেমন কিছু শুনিওনি

তাদের প্যানেল আমার পছন্দ হওয়ার কারণ হলো—এখানে যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থী রয়েছেন, যাদের রয়েছে সততা, নেতৃত্বগুণ ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তাদের ব্যবহার ভদ্র ও মার্জিত। সব মিলিয়ে আমি বিশ্বাস করি, এ প্যানেলের মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

জাগো নিউজ: শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করা প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো সংগঠন কিংবা সহপাঠী অথবা নিজ ধর্মাবলম্বী শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে কোনো কটুকথা শুনতে হচ্ছে কি না?

সুজন চন্দ্র: ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সব দিক বিবেচনা করে আমি এ প্যানেলে এসেছি। এ পর্যন্ত সবাই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন। কেউ আমাকে কটুকথা বলেনি। তেমন কিছু শুনিওনি।

আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীরা আমাদের অবস্থান-কর্মকাণ্ড পছন্দ করায় বিপুল ভোটে জয়
ডাকসু নির্বাচনে প্রশাসন নির্বিকার-নির্লিপ্ত ভূমিকা রেখেছে
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের বিপর্যয়ের নেপথ্যে

জাগো নিউজ: ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত—এমন কোনো বন্ধু বা সিনিয়র-জুনিয়রকে কী কাছ থেকে দীর্ঘদিন দেখার সুযোগ হয়েছে? তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখেছেন নাকি সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলতে দেখছেন?

সুজন চন্দ্র: বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির করে এমন কিছু বড় ভাই ও বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় ছিল। আমি তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। এ সংগঠনের মধ্যে সহনশীলতা আছে। শিবির করেন—এমন সিনিয়র-জুনিয়র বা বন্ধুদের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীলতা নয়, বরং সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলার মানসিকতাই বেশি দেখেছি। এজন্যই আমি নিশ্চিত, শিবিরের সঙ্গে থেকেও আমি আমার নিজস্ব ধর্মীয় পরিচয় ও মূল্যবোধ অটুট রাখতে পারবো। আবার সবার সঙ্গে কাজও করতে পারবো।

আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম নয়, কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গিই ভোটের ভিত্তি হওয়া উচিত। আমি সনাতন ধর্মের একজন শিক্ষার্থী হয়েও শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছি—এটাই প্রমাণ করে যে এখানে সবার জন্য কাজের স্পেস (জায়গা) আছে

জাগো নিউজ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিবিরের প্যানেলে আসায় তারা কী ক্ষুব্ধ? নির্বাচনে তাদের ভোট কতটা পাবেন বলে মনে করেন?

সুজন চন্দ্র: দেখুন, আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম নয়, কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গিই ভোটের ভিত্তি হওয়া উচিত। আমি সনাতন ধর্মের একজন শিক্ষার্থী হয়েও শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছি—এটাই প্রমাণ করে যে এখানে সবার জন্য কাজের স্পেস (জায়গা) আছে। হিন্দু শিক্ষার্থীরা যদি দেখে আমি সত্যিই তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চাই—তাহলে তারা অবশ্যই আমাকে সমর্থন করবে। আমি বিশ্বাস করি, আন্তরিকতা ও কাজ দিয়ে ভোট পাওয়া যায়। শুধু ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে ভোট পাওয়াটা কাম্য নয়।

জাগো নিউজ: রাকসুতে আপনার প্রথমে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। আবার ফিরে পেয়েছেন। কেন বাতিল হয়েছিল? কোনো ভুল ছিল নাকি ভিন্ন কোনো কারণ?

সুজন চন্দ্র: আমার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল ছোট একটি ভুলের কারণে। কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তার একজন প্রস্তাবক থাকতে হয়। আমার প্রস্তাবক ছিলেন হাছান তালুকদার ভাই। তিনি ফরমে ভুলবশত সই করতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেজন্য প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। পরে আপিল করে প্রার্থিত ফেরত পেয়েছি। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমি সব সময় সোচ্চার থাকবো। আমার যে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনেরা আছে, তাদের আমি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে চাই। প্রত্যেকটা হলে আমি উপাসনালয় তৈরি করবো

জাগো নিউজ: ভিপি-জিএসও নয়, কোনো সম্পাদকীয় পদে নয়, আপনি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কী করবেন? যদি শিবিরের পুরো প্যানেল জেতে, আপনি যদি তাতে থাকেন, কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?

সুজন চন্দ্র: শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমি সব সময় সোচ্চার থাকবো। আমার যে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনেরা আছে, তাদের আমি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে চাই। প্রত্যেকটা হলে আমি উপাসনালয় তৈরি করবো।

যদি শিবিরের পুরো প্যানেল জয়ী হয়, তাহলে আমি নিশ্চিতভাবে বড় ভূমিকা রাখতে পারবো। কারণ রাকসুর সব সিদ্ধান্তই যৌথভাবে নেওয়া হয়। সেখানে আমার দায়িত্ব হবে সবার অধিকার আদায়ে সর্বদা সোচ্চার থাকা।

জাগো নিউজ: ডাকসু-জাকসু নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। রাকসুর নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত কেমন দেখছেন? শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হবে বলে মনে করেন কি না?

সুজন চন্দ্র: রাকসু নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসের পরিবেশ মোটামুটি ভালো। আমরা চাই, নির্বাচনী পরিবেশ আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ আর ভয়হীন হোক। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সব সংগঠন আর শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেন, তাহলে অবশ্যই সুষ্ঠু ভোট সম্ভব। আমি আশাবাদী—শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

এএএইচ/এএসএ/এমএফএ/এএসএম

Read Entire Article