‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট পালনের বদলে একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট আনার কারণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম। ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমিসহ বৈষম্যবিরোধী নেতাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে— এমন তথ্য পাওয়ার পরই ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৫ আগস্টে এগিয়ে আনা হয়।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ জবানবন্দি দেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তারা নতুন সরকারগঠনে ৪ আগস্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সরকার কারফিউ ঘোষণা করে। দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা জানতে পারেন, ৬ আগস্ট সরকার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ব্যর্থ করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে, তাদের হত্যা ও গুম করা হতে পারে। তাই তারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার মামলায় নাহিদ ইসলামের পরবর্তী জেরা ২১ সেপ্টেম্বর
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে মাহফুজ আলম (বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা) অন্যান্য ছাত্রসংগঠনসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৫ আগস্ট সারাদেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। তারা শাহবাগে অবস্থান করার চেষ্টা করেন। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী একপর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে তারা শাহবাগে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। পরে শুনি, ঢাকার প্রবেশমুখ যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে আমরা গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। পথিমধ্যে সংবাদ পাই, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছে। ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে।
৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের সংবাদ পান উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের এবং যারা গণহত্যা ও নির্যাতন অংশগ্রহণ করেছেন, তারা দায়ী।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৪৭তম সাক্ষী নাহিদ ইসলাম জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিনই তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ তাকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।
এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম