ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকায় শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই অনুষ্ঠান ঘিরে ইনস্টিটিউশনের কেআইবি মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণেও নেতাকর্মী ও মানুষের লক্ষণীয় উপস্থিতি ছিল। ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন পাশের প্যান্ডেলও ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
মিলনায়তনে প্রবেশ করেই অপু উপস্থিত সাধারণ মানুষের মাঝে চলে যান। প্রত্যেক নেতাকর্মী ও মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। এ সময় অপুকে কাছে পেয়ে তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ তার সাথে হাত মেলান, কেউ তাকে জড়িয়ে ধরেন, কেউ আবার তার সাথে সেলফি তোলেন। অপুও তাদের জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন, আবার অনেকের আবদারও পূরণ করেন, নিজেই তুলে দেন সেলফি। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে স্টেজে নির্ধারিত আসনে বসেন তিনি।
পরে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্রকামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। গুম-খুন, অত্যাচার-নির্যাতন, ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ আজ স্বৈরাচারমুক্ত। মহান রাব্বুল আল আমিন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছেন।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের মাঝে আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনারা কেউ মানুষের মনে কষ্ট দেবেন না। দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না। আমরা প্রমাণ করে দেব, শরীয়তপুর বিএনপির ঘাঁটি। শরীয়তপুর থেকেই আমরা শুরু করতে চাই— বিএনপির তৃণমূলে কোনো বিভেদ নেই, সবাই এক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সেটা প্রমাণে এক হয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে। এ জন্য আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভার শেষ দিকে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু বলেন, ২০১৮ সালে তারেক রহমানের নির্দেশনায় মানুষের সেবা করতে গিয়েছিলাম, মানুষকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম। তখন আমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল কিছু ষড়যন্ত্রকারী।
কারাজীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ আট বছর কারাগারে ছিলাম। আমার ছেলে হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ছিল। তারেক রহমান বলেছিলেন, মানুষের সেবায় নিয়োজিত হও, তাদের কাছে যাও, তাদের ভালোবাসো। আমি তা-ই করেছি। কিন্তু আমাকে শরীয়তপুর-৩ আসনের মানুষকে ভালোবাসতে দেওয়া হয়নি। মানুষকে ভালোবাসতে গেলে, সেবা করতে গেলে, তাকে হত্যা করতে হবে কেন, এটা কেমন রাজনীতি? বিএনপি এই হিংসাত্মক রাজনীতিকে ঘৃণা করে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়নি। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। আমার মা মারা গেছেন, কিন্তু তখন আমাকে এলাকায় থাকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে প্রশাসন থেকে ফোন করে বলেছে যে আপনাকে এলাকা ছাড়তে হবে। আমি বলেছিলাম, আমার মা মারা গেছেন, আমাকে তিনটা দিন থাকতে দিন, কিন্তু দেয়নি। এমনইভাবে শরীয়তপুরের বহু নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের মতো না; আমরা সহনশীল হয়ে দেখাতে চাই, প্রমাণ করতে চাই, আমরা হিংসাপরায়ণ নই।
তিনি বলেন, আমরা আজ একটা শপথ নিতে চাই, আমরা ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করব, আমরা হিংসাত্মক নই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল হিংসাত্মক নয়। আমরা প্রতিটি মানুষের পাশে থেকে প্রমাণ করব যে বিএনপির কাছেই মানুষ নিরাপদ, সবার নিরাপত্তা আমরাই দেব। এভাবেই আমরা প্রমাণ করব, বিএনপির নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদর্শে আদর্শবান।
নিজ নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে অপু বলেন, আমরা সবাই মিলে শরীয়তপুরের উন্নয়ন করব। শরীয়তপুরই হবে বাংলাদেশের মধ্যে মডেল জেলা। যারা উপস্থিত হয়েছেন এবং হতে পারেননি, সবাই মানুষের ঘরে ঘরে ধানের শীষের জন্য ভোট চাইবেন।
শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক সচিব ফারুক আহমেদ, ব্রি. জেনারেল (অব.) জাহিদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মনিরুজ্জামান তালুকদার, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালু, গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সিদ্দিক আহমেদ, গোসাইরহাট পৌর আহবায়ক আলাউদ্দিন সরদারসহ জেলা বিএনপি, গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং ব্যাংকার, সাবেক আমলা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ঢাকাস্থ শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।