নোয়াখালীতে অনুমোদনহীন বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

3 hours ago 5

নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ‘দি নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নাম দিয়ে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

জানা গেছে, নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন মাইজদির হাউজিং এস্টেটের বালুর মাঠে গত ১৬ অক্টোবর থেকে নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম মতিনের নেতৃত্বে শতাধিক দোকান নির্মাণের মধ্যদিয়ে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার কার্যক্রম শুরু করেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা।

এতে জেলা শহর মাইজদির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিক, চিকিৎসকসহ হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা এ মেলার অনুমতি না দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

নোয়াখালীতে অনুমোদনহীন বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

জান্নাতুল ফেরদাউস নামে হাউজিং এলাকার এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, কিছুদিন পরপর এমন মেলা এ এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এমনিতে এ এলাকা সন্ত্রাস কবলিত, তার ওপর মেলাকে ঘিরে এখানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে যায়। মহিলা ও শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। রাস্তায় হাঁটচলাও দায় হয়ে যায়। আমরা এমন মেলার বন্ধের দাবি জানাই।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল মালিক জাগো নিউজকে বলেন, আগে আওয়ামী লীগও জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা না করে এমন মেলা করতো। এখন বিএনপির লোকজনও নিজেদের টাকা আয়ের স্বার্থে জনগণের কথা চিন্তা না করে এসব মেলার আয়োজন করছে। হাসপাতাল এলাকায় একটিমাত্র সড়ক তাও সবসময় ব্যস্ত থাকে। এমন সড়কে এত বিশাল মেলার আয়োজন সত্যি দুর্ভাগ্যজনক।

আবুল কালাম আজাদ নামে শহরের এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, এক গলির শহর নোয়াখালী। এখানে সারাবছর জলাবদ্ধতায় শহরে লোকজন উঠতে পারে না। এখন শুকনো মৌসুম। সামনে ঈদ আসছে, ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পোষাতে এখন পুরোদমে ব্যবসা করার আশা নিয়ে দোকান সাজিয়েছে। এ মুহূর্তে প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে মেলার আয়োজন করে বাহিরের ব্যবসায়ীদের লাভবান করছে। আমরা এ মেলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

নোয়াখালী সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি একরামুল হক ডিপটি জাগো জাগো নিউজকে বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত। কারণ তারা সারাবছর লোকসান দিয়ে এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থায় মাসব্যাপী অস্থায়ী মেলা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নোয়াখালীতে অনুমোদনহীন বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

মেলার আয়োজক নোয়াখালী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফিরোজ আলম মতিন জাগো নিউজকে বলেন, এখানে বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও হাউজিং সোসাইটির অনুমোদন নিয়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতির আগে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন থেকে তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে বন্ধ না করাটা আমাদের অন্যায় হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলে এ মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সাবেক আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মোহাম্মদ নোমান জাগো নিউজকে বলেন, গতবার মেলার আয়োজন করে আমাদের বদনাম হয়েছে। তাই এবার মেলার সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। তবে যেহেতু আমরা চেম্বারের সদস্য তাই হয়তো আমাদের কথা বলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নোয়াখালীতে এখনো এ ধরনের কোনো মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শুনেছি তারপরও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/এএসএম

Read Entire Article