পদ্মার চরে গড়ে উঠছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর ত্রাসের সাম্রাজ্য

4 hours ago 5

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল ও ভারত সীমান্তঘেঁষা এলাকা দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জমি দখলকে কেন্দ্র করে মন্ডল ও কাকন বাহিনীর সংঘর্ষ ও ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

তদন্তে জানা গেছে, শুধু মন্ডল বা কাকন বাহিনী নয়, এ অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, রাখি, কাইগি বাহিনীসহ একাধিক বাহিনী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী হত্যা, জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ যেখানে সীমিত, সেসব চরেই তাদের আস্তানা। কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার দুর্গম চরাঞ্চলজুড়ে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে।

জানা গেছে, ’৯০-এর দশকে লালচাঁদ ও পান্না বাহিনী পদ্মার চরে গড়ে তোলে তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব। দিনে-দুপুরে নারীদের তুলে নেওয়া, জমি দখল, ফসল লুট, মাদক ও অস্ত্র পাচার সবই ছিল তাদের দৈনন্দিন কাজ। ২০০৯ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে লালচাঁদ ও পান্না নিহত হলে বাহিনীর সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর স্বস্তি ফিরে আসে চরে।

তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ঘাপটি মেরে থাকা লালচাঁদ ও পান্না বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত লালচাঁদের ভাই সুখচাঁদ বর্তমানে ভারত থেকে পুনরুত্থিত বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি ফিলিপনগর চরাঞ্চলে তাকে দেখা গেছে বলেও দাবি করেছে স্থানীয়রা। লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ একাধিক সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে চরাঞ্চলে টুকু, গিট্টু, সোহাগ, রাখি, জাবের, জাকির, জামিল, হোসেন, রাজন, সেন্টু, নাজমুল, শরীফ কাইগি, হানিফ, রাজ্জাক, জামিল, জাকির ও সাঈদসহ প্রায় শতাধিক সদস্যের প্রায় ৮টির মতো বিভিন্ন বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

প্রায় দুই দশক আগে লালচাঁদ ও পান্না বাহিনীর দ্বন্দ্বে ৪১ জন খুন হয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

সম্প্রতি কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় পাল্টা পাল্টি মামলা দায়েরের পর, ২৯ অক্টোবর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের শতাধিক সদস্য পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ও তার সহযোগীদের নামে মামলা হলেও তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর এলাকায় সাইদ বাহিনীর হামলায় নিহত হন রাজু আহমেদ (১৮)। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডলের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টিরও বেশি মামলা রয়েছে।

দৌলতপুর থানায় আলোচনায় থাকা আরেক বাহিনী হলো রাখি বাহিনী। এর প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখির বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় সক্রিয় রয়েছে কাইগি ও রাজ্জাক বাহিনী।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, এই অভিযান চলমান থাকবে। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ কালবেলাকে বলেন, পদ্মার চরে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

Read Entire Article