পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

6 hours ago 5

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে এন্ট্রি লেভেলে ‘শিক্ষক’ পদ রেখে ১২তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেন ৯ সদস্যের পরামর্শক কমিট।

কমিটির প্রস্তাবানুসারে- ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের শুরু পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করা হবে।

তবে পরামর্শক কমিটির এমন প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বাস্তবায়নের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন, তারা এতে একমত নন।

আরও পড়ুন:

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ-এর সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) ৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের দাবিটি বাস্তবায়নে তারা নিজের কাঁধে নিয়েছেন। সেজন্য আমরা ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মার্চ ফর ডিগনিটি কর্মসূচি স্থগিত করেছি।

এতে আরও বলা হয়, কিন্তু পরামর্শক কমিটি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, তাতে সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ১০ম গ্রেড রাখা হয়নি। এজন্য আমরা সংস্কার প্রস্তাবনা প্রত্যাখান করছি। আগামীতে আলোচনা করে আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে, কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতির ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশ বিশ্লেষণ করা হবে। সেগুলোর সঙ্গে যদি শিক্ষকরা একমত হন, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। কর্মরত শিক্ষকদের মতামত এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

বেতন-পদোন্নতি নিয়ে যেসব সুপারিশ

শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রস্তাবানুসারে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে; ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আশু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বর্তমানে শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে আছেন এবং প্রধান শিক্ষকের জন্য সরকার ১১তম গ্রেড প্রদান করেছে। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে পদায়নের দাবি উচ্চ আদালতে সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করেছে।

সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটির অর্ন্তবর্তী সুপারিশ: শিক্ষক পদে প্রবেশ ১২তম গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরও দুই বছর পর ১১তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি।

প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ

সরকারের রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার ও প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড নির্ধারণ এবং সব প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়মানুসারে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হবেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে দায়িত্বভাতাসহ পদায়ন করা যেতে পারে।

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য পদসমূহ ও শূন্যপদ আশু পূরণ, সমন্বিত গ্রেডেশন, পারস্পরিক বদলি, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

এএএইচ/এসএনআর/জেআইএম

Read Entire Article