পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো আর হলো না শহীদ আহসানের

2 hours ago 3

আহসানের স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকুরি করবে। প্রতিষ্ঠিত হবে। অসচ্ছল পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু ঘাতকের একটি নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে আহসান হাবিবের এ স্বপ্ন।

গত ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আহসান হাবিব(২৩)।

তিনি চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের ছেলে।

হাবিব চকরিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুবাদে থাকতেন কক্সবাজার শহরে।

শহিদ আহসান হাবিবের মা হাছিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের কথা স্মরণ করে বলেন, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। রাত ৮টায় কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিল সে। ওইদিন শহরের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। পুলিশ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যৌথভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল। এ সময় লাল দিঘীর পাড় এলাকায় পুলিশের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায় আহসান।

তিনি জানান, তখন সহকর্মীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ভর্তি না করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের আছদ আলী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আহসান হাবিবের সেমিপাকা ঘরে শুনশান নীরবতা। বাড়িতে ঢুকতেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আহসানের মা হাছিনা বেগম (৪৫) এগিয়ে আসেন। ছেলে হারানোর শোক তার চোখে-মুখে।

এ সময় সামনে এগিয়ে আসেন আহসানের কলেজ পড়ুয়া ভাই রায়হান ও বোন মাছুমা।

আহসান হাবিবের ছোট বোন কলেজছাত্রী মাছুমা জান্নাত বলেন, ভাইয়ের চাকুরির টাকায় সংসার চলত। পাশাপাশি যোগান দিত আমার লেখা পড়ার খরচও। ভাইয়ের মৃত্যুর পর লেখাপড়া আর করতে পারব কি না জানি না।

এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাছুমা।

আহসানের ছোট ভাই মোহাম্মদ রায়হান বলেন, বাবা অসুস্থ হলেও আর্থিক সংকটের কষ্ট কখনো বুঝতে দেয়নি বড় ভাই আহসান। কয়েক ঘণ্টা পরপর ফোন করে খবর নিতেন আমি কলেজে গেছি কিনা। সেই ভাইটা আজ আমাদের মাঝে নেই।

পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন জানান, আহসান হাবিব নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা হেলাল উদ্দিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। আহসান হাবিব পড়াশোনার পাশাপাশি অসুস্থ বাবার সংসারে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিলেন।

তাই সংসারের ঘানি টানতে তিন বছর ধরে কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাসিক নয় হাজার টাকার বিনিময়ে চাকুরি করতেন।

আহসানের পিতা হেলাল উদ্দিন (৫২) বলেন, আমার ছেলে আমাকে খুবই ভালবাসতো। কখনো বাড়িতে এসে দেখতে না পেলে এদিক সেদিক খুঁজতো। দেশের প্রতি তার খুব টান ছিল। আহসান খুব সাহসীও ছিল। তার স্বপ্ন ছিল সে একদিন সরকারি চাকুরি করে সংসারের সব দুঃখ কষ্ট মুছে ফেলবে। কিন্তু ঘাতকের একটি বুলেট তার সব স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছে।

Read Entire Article