পরিবেশবিজ্ঞান পড়া যে কারণে যুগোপযোগী

15 hours ago 6

পেশাজীবনে পরিবেশ ও পরিবেশসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির মূল্য দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সব স্তরেই এর ব্যাপক চাহিদা।

যা পড়ানো হয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটিতে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা পরিবেশের প্রাকৃতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করেন। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানান সংকট বৈজ্ঞানিকভাবে মোকাবিলার পথ নিয়েও আলোচনা করে এ বিভাগ। যেমন- বর্তমান প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান খুঁজছে।

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। তাই পরিবেশ-ব্যবস্থাপনা পড়তে গিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও জানতে হয়। এ ছাড়াও আছে বন-ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা।

কোথায় পড়বেন

বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত বিষয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারেন–
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: এখানে আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের অধীনে ভূগোল ও পরিবেশ, ভূতত্ত্ব, সমুদ্রবিজ্ঞান, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা এবং আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া পেশাজীবীদের জন্য এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে উইকেন্ড মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে।
• মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
• জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
• শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
• চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কয়েকটি বিষয়ে পড়তে পারেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধীনে।
• বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান অথবা মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান নামে ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে।
• ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
• ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পরিবেশবিজ্ঞান ও পরিবেশ-ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
• ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ভূমি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর করা যায়। আইইউবিতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি সেন্টার আছে, যেখানে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে বিশেষায়িত গবেষণা করা হয়।
• বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
• বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি।

পেশাগত সুযোগ

এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়ার অনেকগুলো রাস্তা খোলা আছে। যেমন-
• বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সেল খোলা হচ্ছে। সেখানে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
• কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিটিউট, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিটিউট, এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, মাছ ও বন্যপ্রাণী সেবা অধিদপ্তর, জাতীয় বন পরিসেবা, খাদ্যনিরাপত্তা বিভাগেও পরিবেশবিষয়ক ডিগ্রিধারীদের জন্য পদ আছে।
• এনজিও-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যেমন- সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবনসহ উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশগত ঝুঁকি নিরূপণের জন্য পরিবেশবিজ্ঞানের গ্রাজুয়েটদের দরকার হচ্ছে।
• বিভিন্ন আইএনজিও (বিশেষ করে জাতিসংঘের অর্গানাইজেশনগুলো) পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিনিয়ত কাজ করছে। চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারের জন্য এটি হতে পারে সুবর্ণ সুযোগ।
• ট্যুরিজম সেক্টরেও এ সংক্রান্ত চাকরি আছে।
• তৈরিপোশাক শিল্পে পরিবেশবিষয়ক গ্রাজুয়েটদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যঝুঁকি এসব নিরূপণে পরিবেশবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েটদের দরকার হচ্ছে।
• এনভায়রনমেন্টাল কনসালটেন্ট বা পরিবেশবিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা যেতে পারে।
• পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর সাংবাদিকতা করার সুযোগ আছে। যেখানে পরিবেশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ কাভার করা, এ বিষয়ের ওপর নতুন আইন ও নীতি এবং পরিবেশ সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা যায়।
• এনভায়রনমেন্ট ফটোগ্রাফার হিসেবে বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্রের হয়ে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।
• শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশবিদ্যার ওপর পড়ানোর সুযোগ আছে।
• দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে।
• ডিরেক্টর অব ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় পর্যালোচনা করতে হয়।
• পরিবেশবিদ্যা নিয়ে পড়ার পর ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, এনভায়রনমেন্টাল কনসালটিং ফার্ম, দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড, এনজিও, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন সংস্থা এবং গবেষণাকেন্দ্রসহ অনেক জায়গায় চাকরির সুযোগ আছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

• যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলো পরিবেশ শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি বৃত্তি দিচ্ছে। বৃত্তি নিয়ে পরিবেশের ওপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে গিয়ে ওসব দেশে ভালো চাকরির সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।

• যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিষয়ে পড়তে ও গবেষণা করতে পারেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে ফেলোশিপসহ নানা আন্তর্জাতিক বৃত্তি, যেমন- ফুলব্রাইট ফরেন প্রোগ্রামের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশসংক্রান্ত বিজ্ঞান ও অর্থনীতি নিয়ে পড়তে পারেন।

• পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তরুণদের অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে। পরিবেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষায়িত বিভাগ হলেও বর্তমান দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে প্রত্যেকেরই প্রাথমিক জ্ঞান থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্কুল-কলেজের কিছু বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে পরিবেশবিজ্ঞানের উল্লেখ আছে সত্য কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এ বিষয়ে শিশুদেরও বিস্তারিত পড়ানো হবে।

আরও পড়ুন

এএমপি/আরএমডি/এসইউ/এমএস

Read Entire Article