কুমিল্লার চান্দিনায় বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা হলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে হামলা চালান অভিভাবকরা। এ সময় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ অপর তিন সহকারী শিক্ষককেও পিটিয়ে লাঞ্ছিত করেন তারা।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলা সদরের চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম কিরণ, বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবু ইউনুছ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাইদুর রহমান সুজন ও ধর্মীয় শিক্ষক মো. ইলিয়াছকে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন এবং তাদের শার্ট ছিঁড়ে লাঞ্ছিত করেন।
জানা যায়, রোববার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা চলছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের ৯ নম্বর কক্ষের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সহপাঠীরাসহ শিক্ষকরা তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে মাথা ও চোখেমুখে পানি দিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে। কিছুক্ষণ পর ওই কক্ষের আরও ১৪ ছাত্রী একইভাবে অসুস্থ হলে তাদের চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ১১ জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে চার জনকে ভর্তি করা হয়।
দুপুর ২টায় দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হলে ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তারা পুরো বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থী মৃত্যুর গুজব রটিয়ে সবাইকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাদেকুর রহমান কিরণ বলেন, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আমরা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন তারা ‘প্যানিক ডিজঅর্ডারে’ অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা শেষে তাদের সবাই সুস্থ আছে। দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষক অফিস কক্ষে পরীক্ষার খাতা গোছানোর সময় তারা এসে আমাদের মারধর শুরু করে। এতে চার জন শিক্ষক আহত হন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, হাসপাতালে আসা অসুস্থ ছাত্রীরা ‘প্যানিক ডিজঅর্ডারে’ আক্রান্ত হয়ে এমনটি ঘটেছে। মূলত এটি কোনো বড় সমস্যা নয়। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১১ জনকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি চারজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী।
চান্দিনা থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা জানান, গুজব রটিয়ে কিছু অভিভাবক এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে একজনকে আনা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নাজিয়া হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।