পলিথিনের ব্যবহার কমাতে সরকারি সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসছে

2 weeks ago 7

পলিথিনের ব্যবহার কমাতে সরকারি অনেক সংস্থা এখন সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, গত এক বছরে নানা ঝুঁকি মোকাবিলা করে সরকার পলিথিন কমাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও এতে অংশ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে।

শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রাজধানী ঢাকার টেকসই উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ দূষণ কমাতে হলে শিল্প উদ্যোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। তিনি দূষণকারী শিল্প-কারখানা বন্ধ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ঢাকার জনসংখ্যার চাপ হ্রাস ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আশপাশের শহরগুলোকে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, টেকসই ঢাকা তৈরি করতে হলে পুরো বাংলাদেশকেই টেকসই করতে হবে, যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হিসেবে রাজধানী শহরের কোনো বিকল্প উৎস নেই, এর ওপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এটা কমার সম্ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে না। ঢাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। একই সেই সঙ্গে সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম একটি সংস্থার আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন তিনি, যার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের নগর জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ রাজধানীতে বসবাস করলেও ঢাকার সবুজায়নের অভাব এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এখানকার জীবনযাপন বর্তমানে হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, অতিকেন্দ্রিকতার কারণে ঢাকায় বন্যা, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার সংকট, নগর দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের নদীগুলোর সুরক্ষার জন্য তিনি নদী কমিশনের সক্ষমতা ও আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণে সুষম নগরায়ণ ও শহরের বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ওপর তিনি জোর দেন। এছাড়াও ঢাকায় প্রস্তাবিত রিং-রোডগুলোকে যোগাযোগের করিডোর বিবেচনা করে প্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি বলে জানান ইকবাল হাবিব।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার উন্নয়নকে মহানগরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ঢাকার রাস্তায় যান্ত্রিক ও অ-যান্ত্রিক যানবাহন চলার কারণে অসহনীয় যানজট হয়ে থাকে, এর দ্রুত প্রতিকার প্রয়োজন। তিনি রাজধানীর বাইরে সব নাগরিক সুবিধা সংবলিত স্যাটেলাইট শহর তৈরির ওপর জোরারোপ করেন এবং এ খাতে বেসরকারিখাতকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলে মত দেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ্ বলেন, জীবিকাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসার কারণে ঢাকা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাই বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না করে আমরা মেগা পরিকল্পনার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যয় বেড়েছে, যদিও তা জনগণের কাজে আসছে না। দেশের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য সুষম পরিকল্পনার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এর বাস্তব সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পলিথিন ব্যবহারের উচ্চ হার ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। পলিথিনের ব্যবহার কমাতে জনগণকে নাগরিক দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ইএআর/ইএ/জিকেএস

Read Entire Article