পশুপাখি কি ভূমিকম্প আগাম টের পায়?

পশুপাখি কি ভূমিকম্প আগাম টের পায়? ভূমিকম্প হওয়ার আগে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে- এমন ধারণা নতুন নয়। সেই রোমান যুগ থেকেই মানুষ বিশ্বাস করে আসছে, ভূমিকম্পের আগে কিছু প্রাণী অদ্ভুতভাবে আচরণ করে। বছরের পর বছর ধরে বহুবার এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেছে যেখানে ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা আগে পাখি, বাদুড়, ময়ূর বা অন্যান্য প্রাণীর অস্বাভাবিক চলাচল বা আচরণ দেখা গেছে। কিন্তু এসব দাবি কি বিজ্ঞানসম্মত? এর উত্তর খুঁজতে যাচ্ছে আধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তি। ২০১৩ সালে জার্মান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ঘোষণা দেয়, তারা প্রায় ১৯ মিলিয়ন ইউরো (২৬ মিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প শুরু করছে—আইকারাস, যার পূর্ণরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন ফর অ্যানিমাল রিসার্চ ইউজিং স্পেস’। রুশ মহাকাশ সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য উড়ন্ত প্রাণীর অভিবাসন পথ শনাক্ত করা। আরও পড়ুন>>সকালে নরসিংদী, সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি ঢাকার বাড্ডায়ভূমিকম্পের পর ‘আফটারশক’ কেন হয়, কতবার হতে পারে?ফ্যাক্ট চেক/ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কি সত্যিই সম্ভব? পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় এক হাজার পাখি ও বাদুড়ের শরীরে বসানো হবে অত্যন্ত হাল

পশুপাখি কি ভূমিকম্প আগাম টের পায়?

পশুপাখি কি ভূমিকম্প আগাম টের পায়? ভূমিকম্প হওয়ার আগে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে- এমন ধারণা নতুন নয়। সেই রোমান যুগ থেকেই মানুষ বিশ্বাস করে আসছে, ভূমিকম্পের আগে কিছু প্রাণী অদ্ভুতভাবে আচরণ করে। বছরের পর বছর ধরে বহুবার এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেছে যেখানে ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা আগে পাখি, বাদুড়, ময়ূর বা অন্যান্য প্রাণীর অস্বাভাবিক চলাচল বা আচরণ দেখা গেছে।

কিন্তু এসব দাবি কি বিজ্ঞানসম্মত? এর উত্তর খুঁজতে যাচ্ছে আধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তি।

২০১৩ সালে জার্মান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ঘোষণা দেয়, তারা প্রায় ১৯ মিলিয়ন ইউরো (২৬ মিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প শুরু করছে—আইকারাস, যার পূর্ণরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন ফর অ্যানিমাল রিসার্চ ইউজিং স্পেস’। রুশ মহাকাশ সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য উড়ন্ত প্রাণীর অভিবাসন পথ শনাক্ত করা।

আরও পড়ুন>>
সকালে নরসিংদী, সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি ঢাকার বাড্ডায়
ভূমিকম্পের পর ‘আফটারশক’ কেন হয়, কতবার হতে পারে?

ফ্যাক্ট চেক/ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কি সত্যিই সম্ভব?

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় এক হাজার পাখি ও বাদুড়ের শরীরে বসানো হবে অত্যন্ত হালকা ট্র্যাকিং ট্যাগ। এই ট্যাগ রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা যন্ত্রপাতির সঙ্গে সংযোগ রাখবে এবং প্রাণীদের অবস্থান জানাবে।

তবে শুধু অভিবাসনের পথ নয়, আইকারাস প্রকল্প ব্যবহার করা হবে প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণ শনাক্ত করার কাজেও। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত জার্মান অর্নিথোলজিস্ট প্রফেসর মার্টিন উইকেলস্কি জানান, প্রথমবারের মতো প্রাণীদের ‘ইন্টেলিজেন্ট সেন্সর’ হিসেবে ব্যবহার করে ভূমিকম্প আগাম শনাক্ত করার সম্ভাবনা যাচাই করা হবে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, পাখি ও বাদুড় অনেক সময় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা তাদের নেভিগেশনে সাহায্য করে। কিন্তু একই সঙ্গে ভূমিকম্পের আগে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনও তারা বুঝতে পারে কি না—সেটিই এখন গবেষণার বিষয়।

পশুপাখি কি ভূমিকম্প আগেভাগে টের পায়?

১৯৯০-এর দশক থেকেই জানা যায়, কিছু ভূমিকম্পের আগে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তিত হয়। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন ঘটে, তা বোঝা যায় ২০০২ সালে।

নাসার বিজ্ঞানী ফ্রিডেমান ফ্রয়েন্ড আবিষ্কার করেন, ভূগর্ভস্থ শিলা অত্যধিক চাপের মধ্যে গেলে সেগুলো থেকে ধনাত্মক চার্জযুক্ত বৈদ্যুতিক মেঘ তৈরি হতে পারে। এই মেঘ ভূমিকম্পের ঠিক আগে পৃথিবীর পৃষ্ঠে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে—যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু প্রাণীরা হয়তো টের পায়। একই কারণে ভূমিকম্পের আগে কখনো কখনো আকাশে দেখা যায় রহস্যময় ‘আর্থকোয়াক লাইটস’।

চীনে ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু চিড়িয়াখানায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের আগে ময়ূর ও ফ্লেমিংগো অস্বাভাবিকভাবে আচরণ করেছে। তবে এসব প্রমাণ বিচ্ছিন্ন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা হয়নি। কিন্তু আইকারাস যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীজুড়ে হাজারো প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করবে, তখন হয়তো এই রহস্যের সমাধান মিলতে পারে।

বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে ১০০টির বেশি বড় ধরনের ভূমিকম্প (মাত্রা ছয় বা তার বেশি) ঘটে। তাই যে কোনো সময় এসব ট্যাগ লাগানো প্রাণী কোনো ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে পারে এবং তখন পাওয়া যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাণী দিয়ে ভূমিকম্প সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু অন্তত এই গবেষণা জানাতে পারে—প্রাণীরা সত্যিই ভূমিকম্প আগাম ‘অনুভব’ করতে পারে কি না?

সুতরাং এক কথায় বলা যায়, পশুপাখি ভূমিকম্প আগাম টের পায়, এই ধারণা এখনো প্রমাণিত নয়।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow