পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন ‘মুসলিমপ্রেমী’, ভোটের আগে সুর বদল

ভোটের আগে সুর বদল করলো পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। আগে কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা চালালেও এখন তারাই নিজেদের ‘মুসলিমপ্রেমী’ বলে দাবি করছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভোট কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের পর এবার পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের প্রতি নরম অবস্থান ও আলাদা প্রচারে নেমেছে দলটি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা (এসআইআর) নিয়ে বিহারে ‘অনুপ্রবেশকারী’ উচ্ছেদের দাবি তুললেও, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বলছে, তারা ‘রাষ্ট্রভক্ত মুসলিমদের’ বিরুদ্ধে নয়। আরও পড়ুন>>পশ্চিমবঙ্গে নির্মাণ হচ্ছে নতুন বাবরি মসজিদ, বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়াভারতে হিজাব পরায় মুসলিম ছাত্রীকে ক্লাসে ঢুকতে বাধা, ফের বিতর্কের ঝড়‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গুজরাটে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম বিজেপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, বিহারে এবার আমরা মুসলিম ভোটও পেয়েছি। তাই পশ্চিমবঙ্গেও তা সম্ভব। কেন পাল্টালো বিজেপির কৌশল? বিশ্লেষকদের ম

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন ‘মুসলিমপ্রেমী’, ভোটের আগে সুর বদল

ভোটের আগে সুর বদল করলো পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। আগে কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা চালালেও এখন তারাই নিজেদের ‘মুসলিমপ্রেমী’ বলে দাবি করছে।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভোট কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের পর এবার পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের প্রতি নরম অবস্থান ও আলাদা প্রচারে নেমেছে দলটি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা (এসআইআর) নিয়ে বিহারে ‘অনুপ্রবেশকারী’ উচ্ছেদের দাবি তুললেও, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বলছে, তারা ‘রাষ্ট্রভক্ত মুসলিমদের’ বিরুদ্ধে নয়।

আরও পড়ুন>>
পশ্চিমবঙ্গে নির্মাণ হচ্ছে নতুন বাবরি মসজিদ, বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
ভারতে হিজাব পরায় মুসলিম ছাত্রীকে ক্লাসে ঢুকতে বাধা, ফের বিতর্কের ঝড়
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গুজরাটে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম

বিজেপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, বিহারে এবার আমরা মুসলিম ভোটও পেয়েছি। তাই পশ্চিমবঙ্গেও তা সম্ভব।

কেন পাল্টালো বিজেপির কৌশল?

বিশ্লেষকদের মতে, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চরিত্র এক নয়। বিহারে জাতিগত সমীকরণ বড় ভূমিকা রাখলেও পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণ তুলনামূলক দুর্বল। সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটার, যাদের প্রভাব রয়েছে বহু আসনে। ২০২১ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ভোটের বেশিরভাগই গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে।

বিজেপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অনেক আসনে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও তারা নির্ণায়ক। সেসব ভোট গতবার আমরা পুরোপুরি হারিয়েছি। এবার তা আর হারাতে চাই না।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমের হার ২৭ শতাংশ এবং হিন্দু ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ।

হঠাৎ সুর বদল

রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি সমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘গত তিন বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম, এবং মুসলিমরাই মুসলিমকে হত্যা করছে। অন্য কোনো রাজ্যে এটা হয় না। শুধু মসজিদ-মন্দিরের কথা শুনে কতদিন চলবে?’

একই সঙ্গে দলের আরেক মুখ্য নেতা শুভেন্দু অধিকারীও তার কথাবার্তায় কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। আগে উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা চালালেও বিহার নির্বাচনের পর তিনি বলেন, ‘বিজেপি কখনো মুসলিমবিরোধী নয়। আমরা শুধু অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের বাদ দিতে চাই, দেশের মুসলিমদের নয়।’

বিজেপির দাবি, তারা কেবল ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের’ বিরোধিতা করছে, রাষ্ট্রভক্ত বা ভারতীয় মুসলিমদের নয়।

বিতর্ক ও সমালোচনা

বিজেপির ‘রাষ্ট্রভক্ত মুসলিম’ শব্দগুলোকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল ও সিপিএম। সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রভক্ত কে, তা কে ঠিক করবে? বিজেপির সঙ্গে থাকলে সে রাষ্ট্রভক্ত, না থাকলে দেশদ্রোহী—এই নীতি চলছে।’

তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘আগে হিন্দু-মুসলিম ভাগ করেছে, এখন মুসলিমদেরও ভাগ করছে—রাষ্ট্রভক্ত ও অরাষ্ট্রভক্ত। মানুষকে কত ভাগ করবে বিজেপি?’

২০২৬ সালের ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই নতুন মুসলিম–প্রচার কৌশল কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow