জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাঁচ শতাধিক নাগরিক।
একইসঙ্গে তারা পাঠ্যপুস্তকগুলোতে আদিবাসী শব্দসহ গ্রাফিতি পুনরায় বহাল এবং পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী সংস্কৃতি ও ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ এবং রচনা পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসহ গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। শিক্ষাবোর্ডের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের আদিবাসীদের পরিচয় এবং অধিকারের প্রতি অবজ্ঞাকেই কেবল স্পষ্ট করে না, বরং এটি জুলাই-অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিকও।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের আদিবাসীদের ওপর ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা, এ ভূখণ্ডের ইতিহাস থেকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভূমিকা মুছে ফেলা এবং রাজনৈতিক দৃশ্যমানতা থেকে বঞ্চিত করাসহ নানা নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। উপরন্তু ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে সংবিধানে এই ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে ‘উপজাতি’ ও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ সম্বোধন করে তাদের অবমাননা এবং যথাযথ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠা আইন, ২০১০ জারির মাধ্যমে এ বঞ্চনাকে চূড়ান্ত রূপ দান করেছিল। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা যখন একটি বহুমাত্রিক-সংস্কৃতির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছি- তখন কতিপয় শিক্ষার্থীর মতের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত হঠকারী ও অগণতান্ত্রিক। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো এনসিটিবির সিদ্ধান্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার এবং আদিবাসী সম্প্রদায়কে কাঠামোগতভাবে নিশ্চিহ্নকরণের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী নীতিকেই অনুমোদন করে।
এতে আরও বলা হয়, এক বা একাধিক গোষ্ঠীর চাপে পড়ে রাতারাতি এনসিটিবির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্তগ্রহণের অস্বচ্ছতাকে ইঙ্গিত করে। এনসিটিবির প্রতি আমাদের আহ্বান তারা বাংলাদেশের আদিবাসীদের প্রতি এ বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং বাংলাদেশকে একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র ও সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে শামিল হবেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নিপীড়ন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জ্বলন্ত স্বাক্ষর। এ দেশে আদিবাসীদের মর্যাদা এবং অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে এমন যে কোনো পদক্ষেপের কাছে নতি স্বীকার করা স্রেফ সেই চেতনার সঙ্গে প্রতারণা করারই নামান্তর। আমরা সব নাগরিক, কর্মী এবং সংগঠনকে এহেন বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতি দেওয়া পাঁচ শতাধিক নাগরিকের নাম দেখতে এখানে ক্লিক করুন।