পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ রাখা রাষ্ট্রদ্রোহিতা, দ্রুত সরানোর দাবি

2 hours ago 5

চলতি শিক্ষাবর্ষে নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে তুলকালাম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই শব্দ পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে অভিহিত করে তা বই থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে দাবি আদায়ে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। পরে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) রবিউল কবীর চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুরে কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যান তারা।

তাছাড়া পাঠ্যবই পরিমার্জন ও সংশোধন কমিটি থেকে রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন খুবই আপত্তিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত, সংবিধান বিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ। এটি বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ সহজ করবে। কারণ বাংলাদেশে একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে প্রচারণা চালায় ও এই পরিচয়ের স্বীকৃতি চায়। তাদের এই প্রচারণা ও স্বীকৃতি চাওয়ার পেছনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোকে দেশে ‘আদিবাসী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন একটি তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘জুমল্যান্ড’ তৈরির পথ সহজ হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেই পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ‘আদিবাসী’ শব্দটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি করে অতি দ্রুত এদের চিহ্নিত করে অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি।

আরও পড়ুন

সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ঢাবি শিক্ষার্থী মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে আসছে। তাদের এই দাবি চরম ভণ্ডামি, জালিয়াতি ও মিথ্যা। ইতিহাস ও নৃ-তত্ত্ব অনুযায়ী- পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডের মতো রাষ্ট্রসমূহ।

এ সময় শিক্ষার্থীরা যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হলো-

১. পাঠ্যপুস্তক থেকে রাষ্ট্রদ্রোহী ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রত্যাহার, অখণ্ড ভারতের কল্পিত মানচিত্রের সব ধর্মীয় গাছের ছবি মুছে ফেলা, পরিমার্জন কমিটিতে থাকা দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী ধর্মহীন রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ, ‘আদিবাসী’ শব্দ অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও এর সঙ্গে যোগসাজশ থাকা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ করানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

২. অবাঙালিদের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) আদিবাসী সম্বোধন করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না, কোনো বই-পুস্তক ছাপানো যাবে না, লেখালেখি করা যাবে না, কোনো নাটক সিনেমা বা গল্প-কাহিনী রচনা করা যাবে না। বাঙালিদেরকে বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে।

৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের (অবাঙালি) ‘আদিবাসী’ বলা ও প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৪. শিক্ষার কথিত মানোন্নয়নের নামে দেশের শিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিও থেকে তহবিল নেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং বৈদেশিক তহবিলের নামে শিক্ষা কারিকুলামকে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মগজ বিক্রি করা যাবে না।

৫. দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জনের ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থা বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের থেকে শতভাগ প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।

এএএইচ/এএমএ

Read Entire Article