পানি চুক্তি পর্যালোচনায় ফারাক্কা পরিদর্শনে বাংলাদেশ-ভারতের প্রতিনিধিরা

3 hours ago 3

গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা করতে পশ্চিমবঙ্গে গেছেন ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। আলোচনার আগে তারা ফারাক্কা পরিদর্শন করেছেন। 

মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি দল কলকাতা পৌঁছান। এ দিন সন্ধ্যায় তারা ফারাক্কা গেছেন। একইসঙ্গে ভারত সরকারের একটি ছয় সদস্যের দলও ফারাক্কায় এসেছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি আলোচনার জন্য ভারত সফর করেছেন। কলকাতা ও ফারাক্কায় ৩ থেকে ৮ মার্চ থেকে যাওয়া ৮৬তম জেআরসি বৈঠকে অংশ নেবেন তারা। 

ভারত জানিয়েছে, এটি বিশেষজ্ঞদের বৈঠক। গঙ্গার পরিস্থিতি দেখে পানিবণ্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এজন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদল ফারাক্কায় এসেছেন।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ‍দুই দেশের বিশেষজ্ঞ দল ফারাক্কার বিভিন্ন জায়গায় পানির বর্তমান অবস্থাসহ একাধিক বিষয়ে কাজ করছেন। আগামী  ৬ এবং ৭ মার্চ কলকাতায় এ বিষয়ে বৈঠক হবে। 

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান ও যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, এটি রুটিন বৈঠক। প্রতি বছর পর দুদেশের বিশেষজ্ঞরা গঙ্গা পর্যবেক্ষণের পর কিছু সিদ্ধান্ত নেন। গত বছরের মার্চেও এ বৈঠক হয়েছিল। 

১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে দুই দেশ গঙ্গার পানি ভাগ করে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে এটি শেষ হবে। আগামী বছর চুক্তির ৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে নতুন করে কিছু পর্যালোচনা ও সংশোধন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ গঙ্গার প্রবাহ ও বণ্টন নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে বসে। তবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ অভিযোগ তুলেছে, শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পায় না। ভারত এসময় প্রবাহ সীমিত করে দিয়ে বেশিরভাগ পানি নিজেরা ব্যবহার করে। অন্যদিকে ভারতের দাবি, পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণে কিছু সময় পানির পরিমাণ কমবেশি হয়। এই সফর ও বৈঠক সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখারই একটি অংশ।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলেই মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল। তাই এই বৈঠকের মাধ্যমে উভয় দেশ নিজেদের মতামত বিনিময় করবে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে পানিবণ্টন আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফারাক্কা পরিদর্শন এবং ৭ মার্চের আলোচনা আগামী বছরের জন্য পানিবণ্টন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের এই সফর তাই শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেই নয়, বরং ভবিষ্যতের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Read Entire Article