মানিকগঞ্জের গজারিয়ায় চার হাজার বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বছরে ৭-৮ মাস পানির নিচে থাকে এসব জমি। ফলে দুটি আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নদী, খাল ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বছরে তিন হাজার ৫০০ টন ধান, ৫০০ টন সরিষাসহ কয়েক হাজার টন সবজি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার সেওতা এলাকার রাস্তা নির্মাণ কাজে প্রায় ১২০০ ফুট বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধে পানি নিষ্কাশনের জন্য যে চার ফিট আরসিসি পাইপ দ্বারা ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে সেটা উঁচুতে স্থাপন করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। খালের মধ্যে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা পড়ে পানি প্রবাহে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সেওতা, বান্দুটিয়া, ভাটবাউর ও দিঘি এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ক্ষুদ্রসেচ বিভাগের গাফিলতি ও নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে গত ১০ বছর ধরে গজারিয়া চকের এ অবস্থা। তারা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও বাজেট নিয়ে কোনো কাজ করছে না। গজারিয়া চকের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার কথা বলে ৪০ লাখ টাকার একটা ব্রিজ নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেই ব্রিজ ব্যবহার হচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের হাসপাতালে।
ভাটবাউর গ্রামের কৃষক সাইজুদ্দিন বলেন, আগে সরিষা বুনতাম এখন পারি না। ইরি ধান বোনা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বের হতে পারছে না আটকে আছে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সরিষা বুনতে পারি নাই ইরি ধানও বোনতে পারছি না। আমার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ক্ষতি হবে।
কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, এখনো জমিতে পানি। সরিষা বোনার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা জমি পরিষ্কার করতে পারতেছি না। প্রতি বছর কৃষকদের কোটি কোটি টাকা লস হচ্ছে। আগে এ চকে কত ভালো ফসল হইতো।
দিঘি এলাকার কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাগো কষ্ট রাখার জায়গা নাই। কয়দিন পর পর বড় গাড়ি নিয়া লোক আসে আর আমাগো আশা দিয়া যায়। শুনছি সেওতার খাল দিয়া এ চকের পানি বাইর কইরা দিবো।
এ বিষয়ে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ক্ষুদ্রসেচ বিভাগ মানিকগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী তিতাস জাগো নিউজকে বলেন, গজারিয়া চকের পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা মমতাজ চক্ষু হাসপাতালে সামনে ৪০ লাখ ১৮ হাজার ৩১৬ টাকা ব্যয়ে ২০ ফুট একটি সেতু নির্মাণ করেছি। এবং দুই থেকে তিন বছর আগে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে পানি সেচ করেছিলাম। আমরা উপজেলার সেচ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দেখি কিছু করা যায় কিনা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গজারিয়া চকের পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে বছরে তিন হাজার ৫০০ টন ধান, ৫০০ টন সরিষাসহ হাজার হাজার টন সবজির উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। শীতের আগে এসব পানি বের করে দেওয়া গেলে সেখানে রবিশস্য উৎপাদন সম্ভব।
আরএইচ/জিকেএস