রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা মোড় সংলগ্ন ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল থাকছে। ফলে যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণ কার্যক্রম চলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত নট দিজ উইক (চলতি সপ্তাহে নয়) বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে বলা হয়েছে।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানিতে ছিলেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেন। ফলে হাতিরঝিলের যে অংশে কাজ চলছিল বা চেষ্টা করছিল, সেই অংশে এবং পান্থকুঞ্জে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলবে না বলে তখন জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আজ আবেদনটি শুনানির জন্য চেম্বার জজ আদালতের কার্যতালিকায় ছিল।
পরে এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, হাইকোর্ট নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন। যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে, অর্থাৎ নির্মাণকাজ চলবে না। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। এতে করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল আছে। হাইকোর্টের প্রত্যায়িত আদেশ এরই মধ্যে হাতে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছিল। যেহেতু হাইকোর্টের আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপি এরই মধ্যে বেরিয়েছে, তাই নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজের বৈধতা নিয়ে পরিবেশসচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ সমন্বয়ক আমিরুল রাজীবসহ ৯ বিশিষ্ট নাগরিক ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি করেন।
অন্য আবেদনকারীরা হলেন- অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম, লেখক ও গবেষক ফিরোজ আহমেদ ও গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিলে বিনোদন ও অন্য উদ্দেশ্যে জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে হস্তক্ষেপ না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল এলাকার ভেতরে নির্মাণকাজ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণকাজ অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে এবং মগবাজার থেকে এফডিসি পর্যন্ত হাতিরঝিল জলাধার পুনরুদ্ধারে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এফএইচ/ইএ/এএসএম