পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার ‘হরমুজ প্রণালি’র সর্বশেষ পরিস্থিতি

3 months ago 24

 

ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে বিশ্ববাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে পণ্যবাহী জাহাজগুলো। শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে; তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ধীরে ধীরে এ অঞ্চলকে কার্যত অচল করে দিতে পারে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিপিং সংস্থা বিমকো’র প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইয়াকব লারসেন জানান, হরমুজ প্রণালি ও লোহিত সাগর এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেক জাহাজ মালিক। তার ভাষায়, পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পারমাণবিক আলোচনায় ইরানের অনুপস্থিতি জাহাজচালকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

হরমুজ প্রণালি ৩৫ থেকে ৬০ মাইল (৫৫ থেকে ৯৫ কিলোমিটার) প্রশস্ত, যা পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরকে সংযুক্ত করেছে। এই রুট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল ও তেলজাত পণ্য পরিবহন করে বিশ্ব শিপিং সংস্থাগুলো, যা বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

এই বছরের শুরুর পর থেকে বৈশ্বিক সমুদ্রপথে বাণিজ্যকৃত জ্বালানির ৩৪ শতাংশ হরমুজ দিয়েই চলেছে, যা বন্ধ হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে। এর প্রভাব এরই মধ্যে কাঁচা তেলের দামে পড়েছে।

ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি কোম্পানি অ্যামব্রে এক বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কায় জাহাজগুলো যেন হরমুজ প্রণালি ও ইরানি জলসীমা এড়িয়ে চলে। তারা বিকল্প ড্রিফটিং লোকেশন বেছে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে। সেই সঙ্গে জাহাজ মালিকদের তাদের জাহাজের সঙ্গে কোনো ইসরায়েলি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা যাচাই করার পর আরব সাগর, ওমান উপসাগর কিংবা পারস্য উপসাগরে প্রবেশের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইরানের হাতে এর আগে গ্রিসের মালিকানাধীন ট্যাংকার জব্দ হওয়ায় এবার গ্রিস নিজ দেশের জাহাজ মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে তারা যেন হরমুজ প্রণালি পারাপারের তথ্য সরকারের কাছে জমা দেন। ডেটা ও অ্যানালিটিকস প্রতিষ্ঠান কেপলার জানায়, এখনো বড় কোনো পরিবর্তন ধরা পড়েনি, তবে তারা নজর রাখছে।

এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন করে আবারও হুথির হামলার আশঙ্কায় আগের মতো স্বাভাবিকভাবে জাহাজ চলাচলের সম্ভাবনা নেই।

নৌ ও আকাশপথে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের হার বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম জেনেটা’র প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি বন্দরজটে পরিণত হতে পারে, তেলের দাম বাড়তে পারে ও জাহাজ ভাড়াও বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, শিপিং কোম্পানিগুলো এখন ‘নিরাপত্তা সারচার্জ’ ধার্য করতে পারে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জয়েন্ট মেরিটাইম ইনফরমেশন সেন্টার (জেএমআইসি) জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালি এখনো খোলা আছে ও বাণিজ্যিক চলাচল স্বাভাবিক। তবে তারা সব শিপিং কোম্পানিকে নিরাপত্তা পরিকল্পনা, নাবিক কল্যাণ, ও জরুরি সাড়া দেওয়ার প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে বলেছে।

সূত্র: সিএনবিসি

এসএএইচ

Read Entire Article