পায়ে পেরেক ফুটলো কিশোরের, ডাক্তার দিলেন জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন

2 months ago 9

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক কিশোরের পায়ে পেরেক ঢোকার পর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে তাকে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আতঙ্কে আছে তার পরিবার।

গত ৩০ জুন মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হয়।

জানা যায়, চৌদ্দ বছর বয়সী ভুক্তভোগী কিশোরের নাম শাফায়েত হোসেন নাঈম। সে পেশায় গাড়ির গ্যারেজ শ্রমিক। কাজ করেন রাফিয়া মটরস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে। কাজের ফাঁকে তার ডান পায়ের তালুতে একটি পুরাতন জং ধরা পেরেক ফুটে যায়। পেরেক ফুটার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে সে ও তার সহপাঠী ইকবাল হোসেন সাব্বিরসহ মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। তাকে পুশ করার কথা ছিল টিটেনাস টক্সয়েড (টেটবেগ) ভ্যাকসিন অথচ এর পরিবর্তে তার শরীরে পুশ করা হয়েছে কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বাদুড়ের কামড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার যে সম্ভাবনা থাকে তা থেকে সুরক্ষার ইনসেপটা ভ্যাকসিন লিমিটেডের রাবিক্স আইজি।

নাঈমের পরিবার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নাঈম উপজেলার ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সোনাপাহাড় গ্রামের আলী আজম মিয়া বাড়ির সালাহ উদ্দিনের ছেলে।

এদিকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তার শরীরে জ্বর অনুভূত হলে পরিবারের সদস্যরা ঘাবড়ে যান। বিষয়টি নিয়ে নাঈমের বাবা সালাহ উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনের দ্বারস্থ হলে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ইন্টার্ন মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট নাজমুল হাসানের ভুলবশত র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত নাজমুল হাসানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরখাস্ত করার বিষয়টিও জানান।

ভুক্তভোগী শাফায়েত হোসেনের ভাষ্য, ‘আমি একটা গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে কাজ করি। কাজ করা অবস্থায় আমার ডান পায়ে একটা পেরেক ফুটে যায়। তখন আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। তখন আমাকে এটিএসের পাশাপাশি আরও একটি ইনজেকশনও দেয়। ইনজেকশনগুলো দেওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যখন ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যাই তখন ফার্মেসিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলেন তোমাকে বিড়াল বা কুকুর আঁচড় দেয়নি তাহলে কুকুরের ইনজেকশন কেন দিলো? তখন আমি উনাকে বলি হাসপাতাল থেকে যেভাবে আমাকে লিখে দিয়েছে আমি আপনার ফার্মেসি থেকে সেভাবে ইনজেকশন নিয়ে গিয়েছি। তখন আমি বুঝতে পারি আমাকে ভুল ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমি তাদের বিচার চাই।’

ভুক্তভোগী কিশোরের বাবা সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে গাড়ির গ্যারেজে কাজ করার সময় তার ডান পায়ের তালুতে পেরেক ফুটে যায়। এরপর সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যারা ছিল তারা একটা এটিএস লিখে দেয় ও পাশাপাশি কুকুরের ইনজেকশনও লিখে দেয়। পরে দুটো তার শরীরে পুশ করা হয়। পরে সে বাড়িতে এসে কয়েকদিন পর বিষয়টি আমাকে জানায়। জানানোর পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনের কাছে যাই। কখন তিনি জানান আমার ছেলের সঙ্গে এমন ভুলের জন্য যে ইনজেকশন পুশ করেছে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমার ছেলের এই ইনজেকশন প্রয়োজন ছিল না তাকে তা পুশ করা হয়েছে। আজ না হয় কাল সমস্যা হতেও পারে। তাই আমি আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে চাই। চিকিৎসার জন্য যত খরচ হয় সব তাদের বহন করতে হবে।’

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগীর বাবা এসেছিলেন। আমি মস্তাননগর হাসপাতালে প্রায় ১৪ বছর যাবত নিয়োজিত আছি। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জরুরি বিভাগে ১৭টা মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট পদের বিপরীতে ৫ জন নিয়োজিত আছেন। দীর্ঘদিন যাবত ওই পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের সেই শূন্যতা পূরণে প্রশিক্ষণ শেষে ইন্টার্নিতে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছেন। তাদের একজন নাজমুল হাসান ভুলবশত র্যাবিস ভ্যাকসিন দিয়েছেন। তবে এটি প্রোটেকটিভ ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনে কোনো ক্ষতি হবে না। ভুল হওয়া উচিত ছিল না। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

এম মাঈন উদ্দিন/এমএন/এমএস

Read Entire Article