পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশের পর স্থগিত এবং পরে নতুন তালিকা প্রকাশের পর যথারীতি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে আলোচিত সেই ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ নেন সাত লেখক। তবে মঞ্চে পুরস্কারপ্রাপ্তদের পেছনে দাঁড় করিয়ে ফটোসেশন করার ছবি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
সেই ফটোসেশনের ব্যাখ্যা দিয়ে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজনদের গ্রুপ ফটোসেশন নিয়ে গতকাল থেকে নানারকম আলোচনা হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন সরকার বা পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্টেজেই পুরস্কারপ্রাপ্তদের গ্রুপ ফটোসেশনের একটা রেওয়াজ চালু আছে। কিন্তু আমরা তো সংস্কার করতে আসা সরকার। আমাদের কেন রেয়াজ মানতে হবে?
আরও পড়ুন
তিনি আরও লিখেন, আজকে আমাদের মন্ত্রণালয়ে এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রুপ ফটোসেশনের এই রেওয়াজ এ বছরের একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠান থেকে আর রাখা হবে না। গ্রুপ ফটোসেশন কোথায় কীভাবে হবে এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
'উপদেষ্টা ফারুকীর ভাষ্য, ছয়মাস হইলো আমরা একটা খুনি-সাইকোপ্যাথের হাত থেকে মুক্তি পাইছি। জাস্ট ছয় মাস! যে খুনি শত শত মানুষকে গুম করিয়েছে, হাজার হাজার বিরোধী মতের মানুষকে খুন করিয়েছে, জুলাইতে একটা নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছে, ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করে তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নাটক করেছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করিয়ে মানুষ মেরেছে- তার সঙ্গে শিষ্টাচার? হিটলারের সঙ্গে শিষ্টাচার? আর ইউ সিরিয়াস? সালাম দিয়ে বলতে হবে, প্রিয় খুনি, আপনি আমার প্রণাম গ্রহণ করুন?
গতকাল শনিবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাতজনের হাতে এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
একপর্যায়ে অতিথিদের পেছনে পুরস্কারপ্রাপ্তদের দাঁড় করিয়ে ফটোসেশন করা হয়। পেছনে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তোলার সেই কাতারে ছিলেন এ বছর প্রবন্ধ/গদ্যে পুরস্কার পাওয়া সলিমুল্লাহ খানও।
আরও পড়ুন
- বইমেলায় শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ডাস্টবিনে ময়লা ফেললেন প্রেস সচিব
- বাংলা একাডেমিকে বিশেষ গ্রুপের লোকের আখড়া বানানো হয়েছে
পেছনে দাঁড়িয়ে এভাবে ছবি তোলার বিষয়ে একদিন পরই রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে জাতীয় কবিতা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকে ট্রল করছে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ছাত্রদের সামনে বসিয়ে আপনারা পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন।
তিনি বলেন, আমি বলেছি, তারা ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বসেছে। বাংলা একাডেমি যদি মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করতে না জানে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব নাকি? তাদের আদব-কায়দা যদি না থাকে আমরা কী করবো?
সমালোচনার জবাবে সলিমুল্লাহ খান বলেন, লোকজন বলছে, আপনি পুরস্কার নিলেন কেন? আরে…বেইজ্জতটা তো পুরস্কার নেওয়ার পরেই করছে।
এমকেআর