কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়িতে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে এখনো প্রায় পুরুষশূন্য গ্রাম। এতে এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও ডাকাত আতঙ্কে ভুগছেন নারীরা। তাদের দাবি একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কারণে গ্রামের নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করছে প্রশাসন। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে এলাকাবাসী।
সোমবার (১১ আগস্ট) কড়ইবাড়ি স্টেশন এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। গ্রামে পুরুষ শূন্য থাকায় কয়েকশ নারী-শিশু এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে জনরোষের শিকার হয়ে গণপিটুনিতে এক ছেলে ও এক মেয়েসহ নিহত হন মাদক কারবারি রুবি আক্তার। নিহতের পর রুবি আক্তারের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। এরপর আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২৫ নম্বর আসামি শাহ আলম চেয়ারম্যানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পুরো গ্রাম গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত ৪ জুলাই ট্রিপল মার্ডার নিয়ে একটি পক্ষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। প্রকৃত অপরাধী ছাড়াও নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে প্রশাসন। এতে করে আতঙ্কে এক মাসেরও অধিক সময় ধরে পুরুষশূন্য কড়ইবাড়ি গ্রাম।
ওই গ্রামের বাসিন্দা রহিমা খাতুন বলেন, এক মাস ধরে আমাদের নিরপরাধ পুরুষরা গ্রেফতারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও ডাকাত আতঙ্কে রয়েছি আমরা। প্রায় প্রতিরাতে গ্রামে বহিরাগত লোক এসে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা যদি আসামি খুঁজতে আসলে সরকারি পোশাক পরে আসবেন। সাদা পোশাকের নামে হয়রানি বন্ধ করুন।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পুরুষরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে খাবার-দাবারসহ অর্থ কষ্টে ভুগছি আমরা। শিশু সন্তানদের নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছি। আমরা চাই যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিরপরাধ মানুষরা গ্রামে ফিরে আসুক।
এ বিষয়ে মুরাদনগর বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ট্রিপল মার্ডারের মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতিরাতে কড়ইবাড়ী এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে পুলিশের চারটি টহল টিম কাজ করেছে। এছাড়াও নিরপরাধ কোনো মানুষ যেন হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরেই ডিউটিতে বের হই। তবে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার কর্মকর্তারা আসে কিনা সেটি আমার জানা নেই। নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানির অভিযোগটি সঠিক নয়।’
জাহিদ পাটোয়ারী/আরএইচ/এমএস