জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদকে পুলিশ শর্টগান দিয়ে কাছে থেকে গুলি করে। এরপর ভারসাম্য হারিয়ে সড়ক বিভাজক (রোড ডিভাইডার) পার হয়ে বসে পড়েন তিনি। তাকে ধরে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে আবারও পড়ে যান।
গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আকিব রেজা খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই জবানবন্দি দেন। গণঅভ্যুত্থানের সময় আকিবও বেরোবির শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যর বিচারিক প্যানেলে রাষ্ট্রপক্ষের ১২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আকিব রেজা। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
আকিব রেজা খান বলেন, ‘গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুর মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল করে লালবাগ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়। আমি দুপুর ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছাই। আমার সঙ্গে বন্ধু রওনক ছিল। আমরা জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কিছু শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে। এ সময় আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর যখন আমরা ভেতরে ঢুকতে পারছিলাম না, তখন পুলিশের সঙ্গে কিছুটা বাগবিতণ্ডা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন ছিল না। মাইকে বলা হচ্ছিল, সবাই শান্ত থাকুন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করুন। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা দেখি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে টিআর সেলও নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমি তখন রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে পূর্ব পাশে চলে যাই। তখনো পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ার সেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করছিল। এর মধ্যে এসি আরিফুজ্জামান ও তার সঙ্গে থাকা কিছু পুলিশ অফিসার আবু সাঈদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। তারা আবু সাঈদের মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হঠে ১ নম্বর গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে গেটটি বন্ধ করে দেয়।’
জবানবন্দিতে আকিব রেজা বলেন, ‘পুলিশ ভেতরে চলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে সমবেত হয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের ধাক্কায় একপর্যায়ে গেট খুলে যায়। এরপর ভেতরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ শর্টগান দিয়ে ছররা গুলি এবং টিয়ার সেল নিক্ষেপ করতে করতে এগিয়ে আসে। আমার শরীরে ছররা গুলি লাগে, তখন আমি গেট থেকে সরে এসে ডিভাইডারের পূর্ব পাশে অবস্থান নেই।’
জবানবন্দিতে আকিব আরও বলেন, এ সময় আবু সাঈদ ডিভাইডারের পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে আসে এবং ১ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাকি শিক্ষার্থীদের সমবেত হওয়ার জন্য ডাক দেন। কিন্তু তখন পুলিশ গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ১ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে আসছিল। আবু সাঈদ সেটি দেখার পর দুই হাত উঁচু করে দুপাশে প্রসারিত করে দাঁড়ায়। আবু সাঈদের হাতে তখন একটি ছোট চিকন লাঠি ছিল। পুলিশ যেন আর গুলি না করে সেজন্য সে হাত প্রসারিত করে আত্মসমর্পণের মতো করে দাঁড়ায়। কিন্তু পুলিশ কাছ থেকে তার দিকে তাক করে শর্টগান দিয়ে গুলি করে। এরপর আবু সাঈদ ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডার অতিক্রম করে পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে চলে যায় এবং রাস্তায় বসে পড়ে। আয়ান নামের একজন দৌড়ে এসে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আবু সাঈদ দাঁড়ানোর পর আবারও পড়ে যায়।
এফএইচ/এমএমকে

1 hour ago
6









English (US) ·