পেট ফুলে থাকা, ব্যথা, গ্যাস? কখন ডাক্তার দেখানো উচিত জেনে নিন

6 hours ago 2

পেট ফাঁপা বা গ্যাস হয়ে থাকা মাঝেমধ্যে খুবই সাধারণ। কিন্তু যদি এই উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

সাধারণত সবাই জানে পেট ফুলে থাকার বিষয়টা কেমন লাগে। পেট ভরে যাওয়া, পেট চাপা দেওয়ার মতো অনুভূতি এবং বেঁধে থাকা জামা-প্যান্ট। এটা অনেক সময় হয় বড় কোনো খাওয়ার পরে বা বেশি তেল-মসলাদার খাবার খাওয়ার পর। মাঝে মাঝে এই গ্যাস বা ফুলে থাকা স্বাভাবিক একটি বিষয়।

খাওয়ার পর ঢেঁকুর আসা বা গ্যাস বের হওয়া অনেক সময় স্বাভাবিক। কারণ আমরা যখন খাই, তখন কিছু বাতাস পেটে ঢুকে যায়, যা বের হতে হয়। সাধারণত মানুষ দিনে ১৫ থেকে ২১ বার গ্যাস বের করে থাকে। কিন্তু যদি গ্যাস আটকে থাকে, পেট ফোলা ও ব্যথা নিয়মিত হয়, তাহলে সেটা বিপদের সংকেত। 

নিচে এমন কিছু কারণ ও লক্ষণ দেওয়া হলো, যেগুলোতে ডাক্তার দেখানো উচিত:

খাবারের প্রতি প্রতিক্রিয়া

খাবার খেতে খেতে আমরা কিছু বাতাসও গিলে ফেলি। নিচের বিষয়গুলো বেশি বাতাস গিলতে সাহায্য করে:

খাওয়ার সময় কথা বলা

দ্রুত খাওয়া বা পান করা

সোডা জাতীয় ফিজি পানীয় খাওয়া

স্ট্র দিয়ে পান করা

চুইংগাম চিবানো বা হার্ড ক্যান্ডি চোষা

কিছু খাবার বেশি গ্যাস তৈরি করে, যেমন:

মটরশুঁটি

বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলি

পেঁয়াজ

স্প্রাউটস (অনেক ছোট ছোট অঙ্কুর)

কিছু মানুষের শরীরের খাদ্যের প্রতি সহনশীলতা থাকে না। খাবারগুলো হলো:

কৃত্রিম মিষ্টি (মানিটল, সরবিটল, জাইলিটল)

ফাইবার সাপ্লিমেন্ট

গ্লুটেন (গমজাত খাদ্য)

ফ্রুক্টোজ

ল্যাকটোজ (দুধজাত দ্রব্য)

আরও পড়ুন : হাত-পায়ের ৫ লক্ষণে বুঝে নিন লিভারে সমস্যা ভুগছেন কি না

আরও পড়ুন : চোখের পাতা লাফানো কি অশুভ, নাকি কোনো রোগের লক্ষণ

যদি মাঝে মাঝে হয়, তবে খাদ্যের ডায়েরি রাখুন, যাতে বোঝা যায় কোন খাবার সমস্যা দেয়। সন্দেহ হলে ডাক্তার দেখানো ভালো।

কোষ্ঠকাঠিন্য (পায়খানা কঠিন হওয়া)

অনেক সময় বুঝতে পারি না যে কনস্টিপেশন হয়েছে, কিন্তু পেট ফাঁপা এবং গ্যাস বেশি হয়। দীর্ঘ সময় পায়খানা না হলে গ্যাস জমে যায়।

সাধারণত এটা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। পানি বেশি খাওয়া, ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া বা ওষুধ নেওয়া যেতে পারে। যদি বার বার হয়, তবে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

এক্সোক্রাইন প্যানক্রিয়াটিক ইনসফিসিয়েন্সি (EPI)

এই সমস্যায় পাকস্থলী থেকে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় রস ঠিকমতো তৈরি হয় না। তাই খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ কঠিন হয়। 

লক্ষণসমূহ:

- অতিরিক্ত গ্যাস, পেট ফুলে থাকা ও ব্যথার সাথে সাথে দেখা দিতে পারে:

- ফ্যাকাশে পায়খানা

- তেলতেলে এবং দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা

- পায়খানা টয়লেটে আটকে থাকা বা ভাসা

- ক্ষুধা কমে যাওয়া

- ওজন কমে যাওয়া

- অপুষ্টি

চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম প্রতিস্থাপন (PERT) প্রয়োজন হতে পারে।

ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)

IBS হল বড় অন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা গ্যাসের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়।

লক্ষণসমূহ:

- পেট ব্যথা, খিঁচুনি, অস্বস্তি

- পেট ফুলে থাকা

- পায়খানার পরিবর্তন – ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

একে কখনো কোলাইটিস, স্পাস্টিক কোলন বা নার্ভাস কোলনও বলা হয়। চিকিৎসায় জীবনযাত্রার পরিবর্তন, প্রোবায়োটিক এবং ওষুধ ব্যবহার হয়।

প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ (IBD)

IBD হল আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোন’স রোগের সামগ্রিক নাম। আলসারেটিভ কোলাইটিসে বড় অন্ত্র ও মলদ্বার প্রদাহ হয়। ক্রোন’স রোগে পুরো পাচনতন্ত্রের আস্তরণ প্রদাহগ্রস্ত হয়।

লক্ষণসমূহ:

- পেট ফুলে থাকা, গ্যাস, ব্যথা

- রক্তযুক্ত পায়খানা

- ক্লান্তি, জ্বর

- ক্ষুধা কমে যাওয়া

- তীব্র ডায়রিয়া

- ওজন কমে যাওয়া

চিকিৎসায় প্রদাহ কমানোর ওষুধ, ডায়রিয়া রোধক, অপারেশন এবং পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।

 ডাইভার্টিকুলাইটিস

ডাইভার্টিকুলোসিস হলো যখন অন্ত্রে দুর্বল জায়গায় পাউচ (ছোট বালতি) তৈরি হয়। ডাইভার্টিকুলাইটিস তখন হয় যখন পাউচগুলোতে ব্যাকটেরিয়া আটকে প্রদাহ হয়।

লক্ষণসমূহ:

- পেট স্পর্শে ব্যথা

- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

- জ্বর

- বমি বা বমিভাব

লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ, খাদ্য পরিবর্তন বা অপারেশন দরকার হতে পারে।

গ্যাস্ট্রোপারেসিস (Gastroparesis)

গ্যাস্ট্রোপারেসিস হলো পাকস্থলী ধীরে ধীরে খালি হওয়ার সমস্যা। এতে গ্যাস, পেট ফোলা, বমি বমি ভাব হয়।

চিকিৎসায় ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও কখনো অপারেশন দরকার হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?

সাধারণ গ্যাস বা পেট ফুলে থাকা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার হয় না। কিন্তু নিচের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত:

- ওষুধ বা খাদ্য পরিবর্তনে উপশম না হওয়া

- অনিয়মিত ওজন কমে যাওয়া

- ক্ষুধা একেবারে না থাকা

- নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা বমি

- দীর্ঘস্থায়ী পেট ফুলে থাকা, গ্যাস বা বুক জ্বালা

- পায়খানায় রক্ত বা শ্লেষ্মা দেখা

- মলত্যাগের অভ্যাসে বড় পরিবর্তন

- উপসর্গের কারণে দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়ে যাওয়া

যদি তীব্র পেট ব্যথা, প্রচণ্ড ডায়রিয়া, বুকে ব্যথা বা জ্বর হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

ডাক্তার কীভাবে সাহায্য করবেন

ডাক্তার প্রথমে আপনার ইতিহাস জানবেন এবং পরীক্ষা করবেন। তার পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন। এরপর উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু হবে, যা আপনাকে উপসর্গ থেকে মুক্তি দেবে এবং জীবনের গুণগত মান বাড়াবে।

আরও পড়ুন : সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

আরও পড়ুন : মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া

নিজের শরীরের ভাষা বুঝুন, উপসর্গ উপেক্ষা করবেন না। সময়মতো চিকিৎসা নিলে সুস্থ থাকা সহজ।

সূত্র: হেলথলাইন

Read Entire Article