কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মেলার দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে উপজেলার হেলিপ্যাড মাঠে নারী, পুরুষ এবং বাচ্চাদের উপচেপড়া ভিড়।
দুই শতাধিক দোকানে বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। বছরের এই দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন মিঠামইন উপজেলার লোকজন ছাড়াও আশপাশের এলাকার লোকজন।
জানা গেছে, শতাধিক বছর ধরেই পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহে ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলাকে কেন্দ্র করে নানা বয়সী মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
মেলার দর্শনার্থী হাসিবুল হাসান বলেন, আমি ঢাকায় থাকি, পৌষ মেলা উপলক্ষে বাড়িতে আসছি। মেলায় পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে এসেছি, খুব ভালো লাগছে। বছরের এ দিনটিকে নিয়ে সবার নানা পরিকল্পনা।
মেলার দোকানি মাইনুদ্দিন জানান, মেলা শুরু থেকে ভালো দর্শনার্থী ছিল। আজকে শেষদিন উপলক্ষে সকাল থেকে প্রচুর লোক এসেছেন। বেচাকেনা খুব ভালো হয়েছে। সবার মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌষ মেলায় এবার প্রায় দুইশতাধিক দোকান বসেছে। নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত এ মেলা। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মিলছে। বিভিন্ন দোকানে আধুনিক খেলনার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। নাগরদোলায় ওঠার জন্য শিশুরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পান থেকে শুরু করে পিতলের বাসন আর বাঁশ-বেতের তৈরি ধামা, সের, পাইকে সনাতন সব দ্রব্যাদি মেলে এ মেলায়। বাহারী পান, পাপড়, তিলের খাজা, কদমা, টক-মিষ্টি আচার এবং বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন কিনে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুই দিনব্যাপী পৌষ মেলা উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর জানান, ‘পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পৌষের শেষ সপ্তাহে বহু বছর ধরেই এ মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা হিন্দু-মুসলমান সব সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে উৎসব তৈরি করে। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়ের এ মেলাকে সুন্দরভাবে উদযাপন করার জন্য আয়োজন করেছি এবং পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। হাওরে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মেলায় এলে বাচ্চারা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ করে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন জানান, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও দুই দিনব্যাপী পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় পুলিশ, আনসার ও গ্ৰাম পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। দুদিনের পৌষ মেলা আনন্দমুখর পরিবেশে শেষ হবে এমন প্রত্যাশা করছি।’