‘সময় গেলে সাধন হবে না’ ফকির লালন শাহের গানের এ কথাই যেন প্রতিফলিত হয়েছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্ষেত্রে। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারের দেওয়া চার বছর মেয়াদি ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার মেগাপ্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদের পর আরও দুই বছর বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত সময় শেষ হতে চললেও প্রকল্পের এখনো ৪০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় আরও দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে মেয়াদ বাড়ানো না হলে মাঝপথেই যবনিকাপাত ঘটবে প্রকল্পটির। তাই মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন অনুমোদনের জন্য উচ্চমহলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে করোনা পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন কর্তাব্যক্তিরা। তবে এসব সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন প্রশাসনের অবহেলা ও অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২৭তম সভায় এ মেগাপ্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের অধীনে ৯টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ১১টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা রাখা হয়। ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণে বরাদ্দ দেওয়া হয় মোট ৪০৬ কোটি টাকা। ১০ তলা ৯টি ভবনের পাঁচটি আবাসিক হল, দুটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার এবং একটি করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অনুমোদনের পর তৎকালীন উপাচার্য হারুন-উর-রশিদ আসকারী প্রশাসন দুই বছর দুই মাস দায়িত্বে থাকলেও সে সময় বড় কাজগুলোতে হাত দিতে পারেনি। এ সময় প্রকল্পের মাত্র আট শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণ ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ মিলিয়ে ২০টি ভবনের মধ্যে কেবল ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ১০টি ভবনের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে শুরুর পরপরই বন্ধ হয়ে যায় দুটি ভবনের সম্প্রসারণ কাজ। বাকি কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়নি প্রথম দুই বছরে।
তৎকালীন প্রশাসনের মেয়াদের শেষ দিকে কভিড পরিস্থিতির জন্য কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যেই উপাচার্যসহ শীর্ষপদে পরিবর্তন আসে। কভিড-পরবর্তী সময়ে আবারও কাজ শুরু করে নতুন প্রশাসন। কিছুদিন কাজ চলার পর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার কয়েক মাস পর কাজে ফেরে ঠিকাদাররা। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় সর্বশেষ পাঁচ মাস ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল দিতে না পারায় কচ্ছপ গতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। ফলে পরিকল্পনা মাফিক কাজ হয়নি। পুরোদমে কাজ চললে প্রকল্পটি শেষ করতে আরও দুই বছর সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছে প্রকৌশল দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, প্রশাসনিক রদবদল, করোনা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সময়েও দ্রব্যমূল্য না কমায় ঠিকাদাররা সঠিকভাবে কাজ করেনি। বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না পাওয়ায় পাঁচ মাস ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তারাও পুরো গতিতে কাজ করতে পারছে না।
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. নওয়াব আলী বলেন, আমরা দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। আবেদন প্রক্রিয়াধীন। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে। আশা করছি অনুমোদন পাবো।
বিল বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অর্থ ছাড় বিষয়ে সরকারি আদেশ হয়েছে। চেক ইস্যুকরণ প্রক্রিয়াধীন আছে।
সময় বাড়িয়েও কাজ সম্পন্ন না হওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিকে তেমন কাজ হয়নি। পরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে রেট বেড়ে যায়। কিন্তু বরাদ্দ না বাড়ানোয় লোকসান হচ্ছে বলে ঠিকাদাররা কাজে অনিহা প্রকাশ করে। আমরা বারবার চিঠি দিয়ে তাদেরকে কাজে ফিরিয়েছি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, কাজ শুরুতেই দেরি হয়েছে। ২০১৮ সালের প্রকল্পের অনেক কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। কতটুকু কাজ হয়েছে এবং কতটুকু বাকি রয়েছে তা নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সভা হবে। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।
মুনজুরুল ইসলাম/এএইচ/জিকেএস