প্রকাশকদের হতাশায় শেষ হলো চট্টগ্রামের বইমেলা

3 hours ago 6

চট্টগ্রামে পর্দা নেমেছে অমর একুশে বইমেলার। প্রথমবারের মতো এবার বইমেলা মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মেলার শুরু থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল কম। শেষ দিন পর্যন্তও ছিল একই পরিস্থিতি। 

মেলায় বিক্রি নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। লাভ তো দূরের কথা, কয়েকটি স্টলের মালিক উল্টো লোকসান হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ এ মেলার আয়োজন করে। 

এক লাখ বর্গফুটের সুবিশাল জিমনেশিয়াম মাঠজুড়ে মোট ১৪০টি স্টল নিয়ে মেলার আসর বসে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের স্টল ছিল ৭৪টি, ঢাকার ৪৪টি। শুরুতে মেলা ২৬ দিনব্যাপী হবে বলা হলেও শেষের দিকে আরও দুদিন বাড়ানো হয়।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, ২৮ দিনের এই মেলায় আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। যদিও প্রকাশকরা বলছেন, বিক্রির পরিমাণ এর ধারেকাছেও নেই। 

প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, মেলায় এবারের ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল একদমই কম। আগতদের অনেকেই বই হাতে নিয়ে ছবি তুলেছেন শুধু। তারা যে পরিমাণ বই বিক্রির আশা করেছিলেন, বাস্তবতা তার ধারেকাছেও নেই। মেলায় দর্শনার্থী কম থাকার পেছনে বইয়ের পিডিএফ বের হওয়া, দাম বেড়ে যাওয়া, কম প্রচারণা, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।

অক্ষরবৃত্ত স্টলে কথা হয় প্রকাশকের বাবা ফজলুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, গত দুই বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হয়েছে ২ লাখের বেশি। কিন্তু এ বছর বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। ব্যবস্থাপনা ঠিক ছিল না। প্রচারের অভাব ছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের তিনটি স্টল আছে। অক্ষরবৃত্ত স্টলে ৫-৬ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। অন্যবার ২০-২১ লাখ টাকা বিক্রি হতো। অন্য দুই স্টলে বিক্রির পরিমাণ আরও কম।

ব্যবস্থাপনা ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্যবার ঢাকা থেকে বড় বড় লেখক, গবেষক আসতেন। এবার তেমন আসেননি। বড় বড় ব্যক্তি এলে তাদের বক্তব্য শুনতে পাঠকরা আসতেন।

আলোর ঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, আমরা হতাশ। অন্যবার ৪ লাখ টাকার মতো হতো। এবার দুই লাখও হয়নি। আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, অন্যবার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বই বিক্রি হতো। এবার ৮০ হাজারের মতো বিক্রি হয়েছে। ৭০ শতাংশ পাঠক দেখে চলে যান। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি শংকর দাশ বলেন, এবার ৩ লাখের মতো হয়েছে। অন্যবার সাড়ে ৫ লাখের মতো বিক্রি হতো। 

পাঞ্জেরি প্রকাশনীর প্রতিনিধি মো. তানিম বলেন, এবারের পরিস্থিতি করোনা-পরবর্তী ২০২২ সালের চেয়েও খারাপ। আমরা হতাশই বলা যায়। শোভা প্রকাশনীর প্রতিনিধি মো. ইমন বলেন, এবারের মেলায় ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মতো বই বিক্রি হয়েছে। আমরা চরম হতাশ। অন্যধারা প্রকাশনীর প্রতিনিধি বলেন, এবার বিক্রি গতবারের তিন ভাগের এক ভাগ হয়েছে। 

গলুই প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, অন্যান্যবার চট্টগ্রামের বইমেলায় বেচাবিক্রি ভালো ছিল। এবার অনেক কম। এই প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি রহমত উল আবেদিন বলেন, এবার বন্ধের দিনও পাঠক নেই। মেলায় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। 

মেলায় কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় কয়েক দিন এসেছি। পাঠক সংখ্যা কম হলেও ভালোই লেগেছে। নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে গতকাল শেষ দিন প্রথমবার মেলায় এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ ফজলুল করিম। মেয়েকে গল্প, উপন্যাস ও একাডেমিক বই কিনে দেন তিনি।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু কালবেলাকে বলেন, আমাদের বিক্রি প্রত্যাশা অনুয়ায়ী না হলেও তেমন একটা খারাপ হয়নি। এবারই প্রথম মাসব্যাপী বইমেলা হয়েছে। দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। সিটি করপোরেশনসহ মেলায় অংশ নেওয়া সব প্রকাশনী সংস্থার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।

Read Entire Article