‘প্রতিদিন ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির শিকার’

3 weeks ago 16

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জোরালো হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারের বৈঠক ডব্লিউএইচও এফসিটিসি-এর আর্টিকেল ৫.৩ লঙ্ঘন এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

কোম্পানির মতামত গ্রহণ জনস্বার্থবিরোধী

সেমিনারে চিকিৎসকরা বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির কোনো মতামত নেওয়া যাবে না। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে কোম্পানির অংশগ্রহণ বন্ধ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে।

প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার মৃত্যু

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায় এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হন। প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার মতে, আইন সংশোধনে আর বিলম্ব মানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি সরাসরি অবহেলা।

সরকারকে দায় নিতে হবে

সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকের কারণে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনে বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা। তাদের মতামত গ্রহণ মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা।

অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ বলেন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন তামাকবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ধূমপায়ীরা চাকরির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তার সেই চেতনা ধরে রেখে গণস্বাস্থ্য ভবিষ্যতেও তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাবে।

প্রস্তাবিত ছয় সংশোধনী

সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ছয়টি সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়, এগুলো হলো:

> শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা

>তামাক বিক্রয়স্থলে প্রদর্শনী নিষিদ্ধ

>কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ

>ই-সিগারেটসহ নতুন তামাকজাত দ্রব্য থেকে তরুণদের সুরক্ষা

>স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে ৯০% করা

>খোলা বা মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাঈদ-উজ-জামান, অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এসইউজে/এসএনআর/জেআইএম

Read Entire Article