ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকাগুলোর পুনঃনির্ধারিত সীমানা বিষয়ে শুনানির তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৪ আগস্ট থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই শুনানি শুরু হচ্ছে। এই তালিকায় যশোর-৩ (সদর) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনসহ এক হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তির শুনানি করার কথা রয়েছে। দাবি-আপত্তির বিষয়ে শুনানি গ্রহণের পর পর্যালোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার।
এ অবস্থায় যশোরে দুটি সংসদীয় সীমানা পরিবর্তনের ‘অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, নির্বাচন অফিস ঘেরাও স্মারকলিপি দিয়েছে জেলা বিএনপি।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে যশোর-৩ ও যশোর-৬ সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের অপচেষ্টার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এই দুই আসনের সীমানা পরিবর্তনের প্রতিবাদে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও করে। সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর-৬ আসনের সীমানা পুনর্গঠনের জন্য গত ৬ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমার প্রস্তাবিত এলাকাটি উন্নয়ন বিচ্ছিন্ন। এলাকাটি যশোর জেলার তিনটি সংসদীয় এলাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। সুতরাং ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমাধান করে এ এলাকার মানুষের কাছে রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি।
তিনি প্রস্তাবিত ৯০ নম্বর যশোর-৬ আসনে অভয়নগর উপজেলা, মণিরামপুরের ছয়টি ইউনিয়ন-ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, কুলটিয়া, দুর্বাডাঙ্গা, নেহালপুর ও মনোহরপুর এবং কেশবপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন-সুফলাকাটি, পাঁজিয়া ও গৌরিঘোনা অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেন।
একই দাবিতে চলতি বছরের ১৯ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর করা আবেদনে সুকৃতি কুমার মন্ডল উল্লেখ করেছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা নিয়ে ৯০ যশোর সংসদীয় আসন ছিল। আর বাঘারপাড়া ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ৮৮ নম্বর যশোর-৪ সংসদীয় আসন ছিল। নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃগঠনের ইতিহাস আছে। প্রস্তাবিত যশোর-৬ এলাকাটি নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল কেন্দ্রিক দৈনন্দিন জীবন পরিচালিত হয়। বর্তমানে অঞ্চলটি অপরিকল্পিতভাবে তিনটি নির্বাচনী এলাকা যশোর ৪, ৫ ও ৬ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তিনজন সংসদ সদস্য তিন দিকে টানাটানির কারণে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান হয়নি ৩০ বছরেও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত যশোর-৬ আসন বাস্তবায়ন করতে হলে কেশবপুর উপজেলাকে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর যশোর-৪ আসনে বাঘারপাড়ার সঙ্গে সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন সংযুক্ত করে সংসদীয় আসন করতে হবে। এতে যশোর-৩ (সদর) আসনের পাঁচটি ইউনিয়ন কেটে যাবে। এমন পরিবর্তনের আভাসকে মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে জেলা বিএনপি।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দাবি করেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি মহল দীর্ঘদিনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিচ্যুতি ঘটিয়ে যশোরের সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছে। জেলা বিএনপি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের যে কোনে চেষ্টার বিরোধিতা করে। এর কোনো প্রয়োজন নেই।
এতে আরও বলা হয়, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বিরোধী কোনো পরিবর্তন মেনে নেওয়া হবে না। এর বিপক্ষে বিএনপি রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে অবস্থান নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজেদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
মিলন রহমান/এসআর/জিকেএস