প্রধান উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না: আন্দোলনকারী

18 hours ago 7

‘প্রধান উপদেষ্টা যতক্ষণ পর্যন্ত না আসবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। তিনি না আসা পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়াও প্রকাশ করব না। তিনি আসবেন, আমাদের যে দাবিদাওয়া আছে সেটা রাজপথে লিখিত আকারে নিয়ে যাবেন, আমাদের লিখিত আকারে দিয়ে যাবেন, তারপর আমরা রাজপথ ছাড়ব।

এমনটাই বলছিলেন আন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী। তিনি বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় বসে পড়েন জুলাই আন্দোলনের আহত ব্যক্তিরা। তারা নিটোর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। তারা দাবি করেন, উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না এবং হাসপাতালের ভেতরে ফিরেও যাবেন না। 

তাদের মধ্যে একজন বলেন, যাত্রবাড়ীতে আমার হাতে গুলি লেগেছে। আমি হাতের মুভমেন্ট করতে পারছি না। অথচ আমাদের ব্যাপারে তারা উদাসীন।

প্রধান উপদেষ্টা এই মুহূর্তে দেশে নেই, তাকে কেন চাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা চার উপদেষ্টাকে আসতে বলেছি। তাদের নামও ঘোষণা করেছি। তারা না আসা পর্যন্ত সড়ক ছেড়ে যাব না।

হঠাৎ রাজপথে আসার সিদ্ধান্ত কেন, এ নিয়ে তিনি বলেন, আজ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মেম হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি চার তলায় পরিদর্শন করেছেন। তিনি আমাদের বি-ওয়ার্ডে ঢোকেননি। চলে যেতে চাইলে আমাদের এক আহত ভাই কথা বলতে চাইলে তাকে ধাক্কা দিয়েছেন সঙ্গে থাকা লোকেরা। আজ তাকে ধাক্কা দিয়ে, কাল আমাদের ছুড়ে ফেলে দেবে।

আমরা যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে নেমেছি। আমাদের কেউ উসকানি দিয়ে নামায়নি। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। এ সময় তারা আরও বড় আন্দোলনের হুমকিও দেন।


জানা গেছে, বুধবার (১৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিটোর পরিদর্শনে যান। তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে ঘুরে দেখেন। সেখানে ছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের একাংশের আহতরা, বাকিরা ছিলেন তৃতীয় তলায়। কিন্তু তৃতীয় তলার ওয়ার্ডে পরিদর্শন না করায় সেখানে থাকা চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরে তারা নিচে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন। ধারণা করা হচ্ছিল গাড়িটি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়িতে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তবে বিষয়টি বুঝতে পারেননি আহতরা। তারা আগের গাড়িটি ও পুলিশের একটি প্রোটোকল গাড়ি আটকে দেন। এরপর তারা দুপুর সোয়া ১টার পর রাস্তায় আসেন।

এমন পরিস্থিতি তখন শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা সামাল দিতে পারেননি। পরে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারপর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর ৫টি ইউনিট হাজির হয়। কিন্তু কোনো বাহিনীর সদস্যরাই আহত আন্দোলনকারীদের থামাতে পারেননি। পরে ধীরে ধীরে সবাই চলে যান। বর্তমানে পুলিশের কিছু সদস্যকে সেখানে মোতায়েন রাখা আছে।

এ বিষয়ে আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের একেকটা ওয়ার্ডে ৪৮ জন মানুষ আছে। কিন্তু উনারা উনাদের পছন্দের বিদেশি পাঁচজন সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশীয় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সামান্য চিকিৎসা দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে ৯টি অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদের শুধু অপারেশনে নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালো মানের চিকিৎসা দিক।

Read Entire Article