ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাপক তথ্য কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের সুপারিশ দিয়েছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এটি বাস্তবায়নে বারবার তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিচ্ছে না কোনো পক্ষই। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিন টাস্কফোর্স এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তরও মিলছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিবিএস ভবনে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার আগে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন আজ জমা দেবে না। তারা আমার কাছেই প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে আজ আমি মূলত সবার সঙ্গে ডিনার করতে এসেছি। এখনো কোনো আলোচনাসভা করা হচ্ছে না।
স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের সুপারিশ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে থাকছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখনো জানি না প্রতিবেদনে কী আছে। হোসেন জিল্লুর রহমান এ বিষয়ে বলতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এমন প্রশ্ন করাটা এখন ঠিক নয়। কেননা আমরা যখন প্রতিবেদন জমা দেবো সেখানেই সব থাকবে। এখনো বলতে পারছি না কী থাকছে। এরই মধ্যে প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা সুবিধাজনক সময়ে তারিখ দিলে আমরা প্রতিবেদন জমা দেবো। এর বাইরে কিছু বলতে পারছি না।
আরও পড়ুন
- স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন জরুরি
- ব্যর্থতার পাল্লা ভারী, সামনে চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু নির্বাচন
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এর আগে জানানো হয়, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। তারা যে সুপারিশ দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ টাস্কফোর্সের সুপারিশের ওপর নির্ভর করছে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠন হবে কি না।
তবে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে টাস্কফোর্স তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের রূপরেখা বা সুপারিশ প্রতিবেদনে থাকবে কি না- এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে কথা হয়েছে খাবার সময়।
সূত্র জানায়, সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ সেটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সহজে ও আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে আটটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে এই বিষয়টিকে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
জানা যায়, গত ১৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কমিশন বাস্তবায়নের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠি পাওয়ার প্রায় এক মাস পর পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ সংস্কারের আইনি কাঠামো তৈরির দায়িত্ব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দিয়ে একটি চিঠি দেয়। বিবিএস গত ২০ এপ্রিল একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। তবে ওই কমিটির কার্যপরিধি স্পষ্ট নয় এবং কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কমিটি গঠনের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ওয়ার্কিং কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
এমওএস/কেএসআর/এমএস