প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

1 hour ago 4
ফেনীতে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে অপসারণ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে ঘণ্টাব্যাপী ফেনীর মহিপালস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সদর উপজেলাধীন পৌর এলাকার মহিপাল কোব্বাদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের অপসারণ দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যায়। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন। পরে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানালে তারা সড়ক ছেড়ে দেয়।  শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বছরের মাঝে হঠাৎ করে রুটিন পরিবর্তন করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করা হচ্ছে। যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক আছেন, তাদের দিয়ে সে বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হয় না। ২০২৫ সালের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে ৯০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায় করা হলেও তার কোনো হিসাব নেই। বিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা হয়, প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়। স্কুল ভবন রাতের বেলায় ভাড়া দেওয়া হয়, পানি ট্যাংক প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি লাইব্রেরির টেলিভিশনও তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।  শিক্ষার্থীদের দাবি, যোগ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, যারা স্থানীয় বাসিন্দা হবেন না। স্কুলের পাশে হাইওয়ে থানার একটি পরিত্যক্ত ভবনে উশৃঙ্খল তরুণরা অবস্থান নিয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে এবং মাদকসেবনের আড্ডা বসায়। স্কুল মাঠ ও পরিবেশ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানান তারা। এ বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান কালবেলাকে জানান, আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করে পুরো বিষয়টা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের হুমকি, বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। স্কুলে রাতের বেলা শ্রমিক ঘুমায় এটা স্কুল নাকি বাসা? এই টাকা কই যায়? টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পাশ করিয়ে দেয় প্রধান শিক্ষক। স্কুলের মালামাল নিজ বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।  তিনি জানান, ২০২৩ সালের জামানত ফি নামে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে লাখ টাকা নেওয়া হলেও তার হিসাব স্কুল ফান্ডে নেই। আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান উদ্বেগজনকভাবে খারাপ হচ্ছে। চলতি বছরে এসএসসিতে ১০৩ জন পরীক্ষা দিয়ে মাত্র ৪৭ জন পাস করেছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ না করে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন কালবেলাকে জানান, আমি কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। শিক্ষার্থীরা মূলত ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক পরিবর্তন করায় ক্ষিপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া সব আয়-ব্যায় বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন উপকমিটির মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি ডাক্তার সোহরাব হোসেন তানভীর কালবেলাকে জানান, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত কিছু পেলে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা কালবেলাকে জানান, আমরা এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ওদেরকে ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছি এবং প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। আর প্রধান শিক্ষককে সাত দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Read Entire Article