রাজশাহী জেলায় নদীভাঙন, চরে জরুরি সেবা ও পরিদর্শনের জন্য রয়েছে একটি স্পিডবোট। কিন্তু যানটিতে জরুরি কাজের চেয়ে বেশি করা হয় প্রমোদভ্রমণে। বিশেষ করে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নদী ভ্রমণে ব্যবহার হয় এটি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলা পুলে ব্যবহৃত স্পিডবোট দুটি। একটি অব্যবহৃত। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছর এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ খাতে জ্বালানি বাবদ ৯১০ লিটার অকটেন ব্যবহৃত হয়েছে। গত দুই বছরে এ স্পিডবোটটি ৩৪ বার ব্যবহার করা হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৪ বার জেলা প্রশাসনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ৩০ বারই ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণে।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছিলেন, জেলা জজ, এডিসি (সিরাজগঞ্জ) বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), রাজশাহী– নদী রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন, জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি), পবা– চর মাঝারদিয়া পরিদর্শন, অতিরিক্ত সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার (রংপুর), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, পুলিশ সুপার (ডিবি), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, দুদকের সচিব, সমন্বয় ও সংস্কার, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অতিরিক্ত সচিব ও জেলা প্রশাসন (জামালপুর)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী কমিশনার (মিডিয়া সেল) এস. এম. রকিবুল হাসান বলেন, ‘স্পিডবোট মূলত আমাদের নদীভাঙন পরিদর্শন, ত্রাণ বিতরণ, পদ্মা চরের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াতের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত ডিসি অফিসের জরুরি কাজের জন্য ব্যবহার হয়।’
জরুরি যানে উচ্চপদস্থদের ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা প্রটোকল পান, তাই তারা ব্যবহার করতে পারেন। মাসে অন্তত ২০ দিন সিনিয়র কর্মকর্তারা আসেন। তখন তাদের প্রটোকল অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়।’
টিআইবি রাজশাহীর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক দীপকেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘সরকারের একটি বড় অপচয় হল সরকারি কর্মকর্তাদের এসব অপব্যয়। রাজশাহীর স্পিডবোটটি এখন তারা ভ্রমণতরী হিসেবে ব্যবহার করে সরকারের অর্থ অপব্যয় করছে। অথচ তারা কাজের কাজ করছে না। এসব অপব্যয়ের কারণে খরচ বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জরুরি যানবাহনে ভ্রমণতরী বানানো একেবারে অনুচিত। এটি তারা করতে পারে না। তাদেরকে এটি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।’
সাখাওয়ত হোসেন/আরএইচ/এএসএম