প্রাইম মেডিকেলে শিক্ষার্থীকে র্যাগিং, জড়িতদের বিচার দাবি
রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজে র্যাগিংয়ের নামে ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর প্রাইম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে প্রাইম মেডিকেল কলেজের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আফিফ সুকৌশলে ক্যাম্পাস থেকে কলেজ হোস্টেল সংলগ্ন খোলা মাঠে নিয়ে যায়। পরে ১৩তম ব্যাচের রিয়াদ ও আব্দুল আলিমের নেতৃত্বে সাজিদ, আলিম, আকাশ, ইমরানসহ শিক্ষার্থী তোহাকে বেধড়ক মারধর করে। দীর্ঘ দুই ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতনের পর শিক্ষার্থী তোহা মুঠোফোনে ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ামুল হাসান ও হৃদয়কে জানায়। পরে আনসারের সহযোগিতায় কলেজের প্রফেসর শরিফুল হক (অর্থোপেডিক বিভাগ) তোহাকে উদ্ধার করে প্রাইম মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তোহাকে নির্যাতনের ঘটনার কথা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদি হয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পাল্টা ইভটিজিং মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহা জানান, আমার সহপাঠী মোছা. মালিহা আরশির সঙ্গে ১৩তম ব্যাচের সিনিয়র ভাই আব্দুল্লাহ আফিফের প্রেমের সম্পর্কের জেরে আরশি প্রায় সময় আমাদের ক্লাসমেটদের প্রেমিকের ভয় দেখাতো। এটা নিয়ে ডিপার্টমেন্টের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আমি রাগ করে আরশির মেসেজের উত্তরে বলেছিলাম আফিফের টাইম নাই আমাদের কাছে। এটা নিয়েই আমাকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ১৩তম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আফিফসহ ৫ জন। এখন ওরাই আমার নামে ইভটিজিং মামলা করতে চাচ্ছে। ইভটিজিং মামলা করতে তো সাক্ষী প্রমাণ কিছু লাগে না। স্যারেরা বললো তদন্ত করে শাস্তি দিবে। তাই অভিযোগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মারধর করার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আফিফ জানান, একটা মেয়েকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে আমার সম্মানহানি করছে তাই সিনিয়র হিসেবে শাসন করেছি। আমার তো ওর নামে মামলা করা উচিত ছিলো। সেটা না করে শাসন করেছি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কমিটি দেওয়ার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ১৩তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থীরা এক বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাস গেটের সামনের রিয়া হোটেলে খাবার খেয়ে বিল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাঙচুর করে ক্যাশ লুট করেছিল। সে সময় কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের প্রটেকশন দেয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্নের অজুহাতে তাদের অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে কলেজ প্রশাসন। এবারো তদন্ত কমিটির নামে সময়ক্ষেপণ করে শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়ে অপরাধীদের মাফ করে দেওয়া হবে।
প্রাইম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. শরিফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত দুইজনেই আমাদের ছাত্র। তারা আমাদের সন্তানের মতো। অভিযুক্তদের নামে মামলা হলে তারাও ইভটিজিং মামলা করতে চেয়েছিলো। এখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহা থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাইম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নূর ইসলাম জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ তোহাকে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করে গুরুতর জখম করে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকদেরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং তদন্তাধীন সময়ে তাদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তোহা অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।